ডলারের রেট নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনা করবেন ব্যাংকাররা
রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডে ডলারের রেট নির্ধারণের দুই সপ্তাহ পর ফের সভায় বসছে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)।
আজ সোমবার বিকেল ৫টার দিকে সোনালী ব্যাংকে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ডলারের রেট নির্ধারণ করার পর ব্যাংকগুলো ১০ কর্মদিবস লেনদেন করেছে। নতুন পদ্ধতিতে ডলারের দর নির্ধারণ করা নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো ছোটখাট কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হচ্ছে। মূলত এসব নিয়েই সভায় আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
ডলারের রেট নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হলেও সহসাই রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডে নির্ধারিত ডলারের দাম পরিবর্তন হবে না বলে আভাস দিয়েছে বাফেদা ও এবিবির বেশ কয়েকটি সূত্র। তাদের মতে, এই দুই ক্ষেত্রে রেট নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নতুন করে রেট নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকারদের সভায় এক্সপোর্ট প্রসিডে ৯৯ টাকা ও রেমিট্যান্সের ডলার ১০৮ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত হয় । পরদিন থেকে ব্যাংকগুলো সেটি বাস্তবায়ন শুরু করে। এছাড়া, ডলারের রেট নির্ধারণেও নতুন একটি সূত্রের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। এই সূত্র অনুযায়ী, পাঁচদিনের ডলার কেনার দরের ওয়েটেড অ্যাভারেজ নিয়ে ডলার কেনার নতুন রেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আগে ব্যাংকগুলো প্রতিদিনের ডলার কেনার রেট ওইদিনের কেনা ডলারের দাম থেকেই ঠিক করা হতো।
গত কয়েকদিন আগে প্রতিদিনের ডলার কেনার রেট নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সভায় বসে বাফেদা। সভায় ট্রেজারি প্রধানেরা রেট নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে নিজেদের মতামত দেন।
সভায় উপস্থিত একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, বর্তমানে পাঁচ দিনের ডলার কেনার রোলিং ওয়েটেড অ্যাভারেজ করা হচ্ছে। সেখানে অনেকেই সেটিকে বাড়িয়ে ১০-১৫ দিন করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এছাড়া বাফেদার প্রতিদিনের করা ৫৫টি ব্যাংকের ডলার কেনার এভারেজ রেট নিয়েও কথা বলেছেন অনেকে। বাফেদার করা এভারেজ ডলার রেট দিয়েই দিনশেষে নিজেদের কাছে থাকা ডলার রিজার্ভ মূল্যায়ন করে থাকে ব্যাংকগুলো। তবে সব ব্যাংকের ডলার কেনার রেট একরকম না হওয়ায় রিজার্ভ মূল্যায়নের পরদিন অনেক ব্যাংকই ওই রেটের চেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করছে। ফলে, আদতে লস না হলেও রিজার্ভ বেশি দামে মূল্যায়নের কারণে তাদের খাতায় লস দেখাচ্ছে। তাই, এই প্রক্রিয়াটি সংশোধনের জন্য মত দিয়েছেন বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান।
বাফেদার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বাফেদার করা মিটিং থেকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আজকের সভায় সেটি উপস্থাপন করা হবে। সেটি নিয়ে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানাবেন ব্যাংকাররা।
তবে রপ্তানিকারকদের মতে, এক্সপোর্ট পেমেন্ট এনক্যাশ করার ক্ষেত্রে রেট কম দিয়ে তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। রেট কম পাওয়ার কারণে অনেক রপ্তানিকারকই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনামতো ৩০ দিন নিজের একাউন্টে ডলার ধরে রাখছেন। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে এক্সপোর্ট পেমেন্ট এনক্যাশ করা আগের তুলনায় কমে গেছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, 'রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে রেট দেওয়া হচ্ছে ১০৮ টাকা, আর রপ্তানিকারকদের দেওয়া হচ্ছে ৯৯ টাকা, এটা আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। আবার আমরা যখন আমদানির জন্য ডলার কিনতে যাই, তখন ১০৪-১০৫ টাকা রাখা হচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।'
তবে এই রেটের জন্য ব্যবসায়ীদের এক্সপোর্ট পেমেন্ট এনক্যাশ না করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এক দিন ব্যাংকে টাকাটা ফেলে রাখাও আমাদের জন্য লস। বেশিরভাগ রপ্তানিকারকই এনক্যাশ করিয়ে ফেলছেন। ৫-১০% রপ্তানিকারক হয়তো এক্সপোর্ট পেমেন্ট ধরে রাখছেন।
ব্যাংকগুলো বলছে, এখন বিশ্ববাজারে ডলার নিয়ে অস্থিরতা চলছে। রপ্তানিকারকেরা যে এক্সপোর্ট আয় নিয়ে আসেন তার একটা বড় অংশই কাচামাল আমদানিতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলায় খরচ হয়ে যায়। তারপর বাকি যে ডলার থেকে যায়, সেটি এনক্যাশ করাতে তারা রেট একটু কম পাচ্ছেন। তবে, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানিকারকদের সাময়িক সময়ের জন্য এ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বাফেদা জানিয়েছে, রোববার ৫৫টি ব্যাংকের ডলার কেনার ওয়েটেড অ্যাভারেজ এসেছে ১০২.০৯ টাকা। ব্যাংকভেদে ডলার কেনার দাম পড়েছে সর্বনিম্ন ৯৯ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০৬.৭৫ টাকা। এই রেট থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি দামে আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট করে ব্যাংকগুলো।