বাংলাদেশে জাপানের ৬৭% কোম্পানি দক্ষ কর্মী সংকটে
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চাইলেও দেশে দক্ষ কর্মী সংকটের কথা বলেছে ৬৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক সমীক্ষা তুলে ধরে সংস্থাটির ঢাকার প্রতিনিধি ইউজি আন্দো বলেন, "বাংলাদেশে ৩৩৮ টি জাপানি কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ শতাংশ কোম্পানি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। তবে ৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই বলেছে, দক্ষ কর্মীর আভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচলনা করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
সোমবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর বিডা ভবনে বংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) এবং জেট্রো যৌথভাবে 'ওয়েলকামিং ইনভেস্টমেন্ট ফ্রম জাপান, লেসনস ফর বাংলাদেশ, ফ্রম দ্য এক্সপেরিয়েন্স ইন ইন্ডিয়া' শীর্ষক এক নলেজ শেয়ারিং সেশনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জেট্রোর ঢাকা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী সংকটে ভুগছে, এমন জাপানি কোম্পানিগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালে এই সংকটের সম্মুখীন কোম্পানি ৬৭.৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২০ সালেও এই সংখ্যা ছিল ৪৮.৫ শতাংশ।
এছাড়া, প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতি এবং প্রবিধান, সময়সাপেক্ষ শুল্ক পদ্ধতি (৪৬.৭ শতাংশ) এবং শুল্ক ছাড়পত্র পদ্ধতিতে জটিলতাকেও (৪৬.৭ শতাংশ) এখানে ব্যবসার করার ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
এক প্রশ্নের জাবাবে ইউজি আন্দো বলেন, কাস্টমসের অটোমেশন করতে হবে। এটি হলে কাজ দ্রুত হবে।
জেট্রোর নয়াদিল্লির চিফ ডিরেক্টর জেনারেল তাকাশি সুজুকি জানান, ভারতে জাপানের ১ হাজার ৪৩৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ভারতীয় অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অধিক পরিমাণ জাপানি বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরেন তিনি।
তাকাশি সুজুকি বলেন, জাপান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং (জেআইএম) জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য একটি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র তৈরি করছে। দক্ষ কর্মী তৈরি করতে এমন উদ্যোগ বাংলাদেশেও নেওয়া যেতে পারে। এটি হলে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই দক্ষ কর্মী পাবে।
বিডার এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে জেট্রো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আসছে, আর দিন দিন এই বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হওয়া এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ।
তিনি আরও বলেন, "দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো আমাদের জানালে আমরা দ্রুত তা সমাধানে কাজ করবো। বিনিয়োগকারীরা যেনো সহজে সেবাগুলো পায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।"
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে এক হাজার একর জমিতে 'বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন' গড়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই সেখানে বিনিয়োগ করার জন্য জাপানের ১০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে।
শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, "আমারা সারাদেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ইকোনমিক জোনগুলোয় বিনিয়োগের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা থাকবে। আশা করি, জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো ইকোনমিক জোনগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে।"
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন ও জেট্রোর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুয়া নাকাজো।