সিএসআর ব্যয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ব্যাংকগুলো, মোটের ৭৩% দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়
সিএসআর (কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) ব্যয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, সিএসআর ব্যয়ের ৩০% শিক্ষা, ৩০% স্বাস্থ্য, ২০% পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন এবং বাকি ২০% দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য খাতে করা যাবে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকই এই নীতিমালা পুরোপুরি মানেনি। এর আগে মোট ব্যয়ের প্রায় ৩০% শিক্ষা, ২০% স্বাস্থ্য এবং ১০% জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা ছিল। সেটিও মানতে পারেনি সিংহভাগ ব্যাংক।
আগের ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে ১১১%। এই সময়ে সিএসআর খাতে ব্যয়ের ৭৩.৩৩%-ই ব্যয় হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৭টিই সিএসআর খাতে কোনো ব্যয় করেনি। এ খাতে ব্যয় না করা ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, সিটিজেনস ব্যাংক লিমিটেড, কমিউনিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো জানুয়ারি-জুন সময়ে সিএসআর ব্যয় করেছে ৬২৯ কোটি টাকা। আগের ছয় মাসে ব্যাংকগুলো ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। চলতি বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৬২ কোটি টাকা। আগের ছয়মাসে এই খাতে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল ব্যাংকগুলো। ব্যয় বৃদ্ধির হার ২৪৯%। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় বেড়েছে ৩৩৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩২৯ কোটি ব্যয়ই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের আওতায় প্রধানত এ বছরের প্রথমার্ধে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে শীতার্ত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়, যার সিংহভাগ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১২টির শিক্ষাখাতে, ১৪টির স্বাস্থ্যখাতে এবং ৪৭টির পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে সিএসআর ব্যয় শূন্য।
সিএসআর খাতে ২০২১ সালে ৭৫৯ কোটি ও ২০২০ সালে ৯৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করে ব্যাংকগুলো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টিই কোনো সিএসআর ব্যয় করেনি। বাকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে মোট সিএসআর ব্যয় করেছে ৪.৩৬ কোটি টাকা। এই ব্যয় আগের ছয় মাসের তুলনায় ২৯% বেশি। ব্যয় বেড়েছে শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে। বিপরীতে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
খাতভিত্তিক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান শিক্ষাখাতে, ২৬টি স্বাস্থ্যখাতে ও ৩১টি পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে কোনো সিএসআর ব্যয়ই করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "আমাদের নির্দেশনা হলো প্রতিটা ব্যাংক তাদের নিজস্ব সিএসআর পলিসি করবে, যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড অনুমোদন করবে। যদি ব্যাংকের আফটার-ট্যাক্স নেট ইনকাম থাকে, তাহলে সিএসআর বাজেট প্রণয়ন করবে। এই বাজেটের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া খাতগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণে খরচ করতে হয়।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মতে আফটার-ট্যাক্স নেট ইনকাম না থাকলে সিএসআর ব্যয় না করলেও চলবে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, "নেট ইনকামের কত শতাংশ সিএসআর ব্যয় করতে হবে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি কোনো নির্দেশনা নেই। কোনো কোনো ব্যাংক আফটার ট্যাক্স নেট ইনকামের ২৮% সিএসআর ব্যয় করেছে, আবার কোনো ব্যাংক ইনকাম থেকে কোনো খরচই করেনি। তবে এই ব্যয় ব্যাংকগুলোর ওভারঅল চিত্র প্রকাশ করা ক্যামেলস রেটিং এর ম্যানেজমেন্ট এফিশিয়েন্সি অংশের রেটিংকে প্রভাবিত করে।"