শেয়ার কারসাজির তদন্তে আবারো সাকিবের নাম
এবার আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি নিয়ে করা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে বাংলাদেশ টি২০ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নাম।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করা দেশ সেরা এই ক্রিকেটারের নাম এর আগেও চারটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি নিয়ে করা কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছিল।
বিএসইসি'র তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীরা সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কারসাজি করে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৬১ শতাংশ বাড়িয়েছে।
সে সময় সাকিল আল হাসান ইবিএল সিকিউরিটিজে তার বিও অ্যাকাউন্ট থেকে আইপিডিসি'র ১১ লাখ শেয়ার কিনেন এবং ১০.৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করেন।
যদিও এই কারসাজির ঘটনায় বিএসইসি সাকিবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীদের দেড় কোটি টাকা জরিমানা করে গত ৩০ অক্টোবর চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি জানায়, আইপিডিসি'র শেয়ার কারসাজি করে হিরু এবং তার সহযোগীরা ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
কমিশন সূত্র জানায়, ওই সময় আইপিডিসি ফাইন্যান্সের মোট শেয়ার লেনদেনের ৪৫ শতাংশই করেছে হিরু এবং তার সহযোগীরা। সেখানে সাকিবের অংশ মাত্র ১.৮০ শতাংশ।
বিএসইসি'র মূখপাত্র এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শেয়ার কারসাজির তদন্তে অনেকেরই নাম আসে। কিন্তু আইনের অধীনে যাদের দোষী প্রমাণ করা যায় শুধু তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।"
এ বিষয়ে সাকিল আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
একটি ব্রোকারেজ ফার্মের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, "শেয়ারবাজারে আবুল খায়ের হিরু একজন বড় গ্যাম্বলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আর সাকিব আল হাসান তার ফাঁদে পড়েছে। যদিও প্রভাবশালী হিসেবে সাকিব জরিমানা থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে।"
সাকিব আল হাসান ছাড়াও আইপিডিসি'র শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে বড় বিক্রেতা হিসেবে ইবিএল সিকিউরিটিজ এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েদুর রহমানের নাম এসেছে।
ওই সময় ইবিএল সিকিউরিটিজ আইপিডিসি'র ৮০ লাখ শেয়ার এবং সায়েদুর রহমান ১৫ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছিল।
চার কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতেও সাকিব
যদিও চারটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীরা জড়িত। তারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার দর বাড়িয়েছিল।
সাকিব ইবিএল সিকিউরিটিজ, ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, আইআইডিএফসি সিকিউরিটিস অ্যান্ড এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে এই সিরিয়াল ট্রেডিংয়ে যুক্ত ছিল বলে বিএসইসি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাকিব ওয়ান ব্যাংকের ৭৫ লাখ শেয়ার কিনে ১০ লাখ শেয়ার বিক্রি, এনআরবিসি ব্যাংকের ২৭ লাখ শেয়ার কিনে ১ লাখ বিক্রি, ফরচুন শুজ এর ৩৫.৩৭ লাখ শেয়ার কিনে ৩.৮৩ লাখ বিক্রি এবং এশিয়ান ইনস্যুরেন্স এর ৮.২০ লাখ শেয়ার কিনে ২ লাখ বিক্রি করেছিলেন।
তবে এই কারসাজির ঘটনায় হিরু ও তার সহযোগীদের মোট ৯ কোটি টাকা জরিমানা করলেও সাকিবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি।
যদিও এই শেয়ার কারসাজি থেকে হিরু এবং তার সহযোগীরা ৩৯ কোটি টাকা আয় করেছিল।
এদিকে ২০২০ সালে সাকিবের প্রতিষ্ঠান মনার্ক হোল্ডিং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের টিআরইসি লাইসেন্স নিয়ে ব্রোকারেজ ফার্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান।
ব্রোকারেজ কোম্পানিটিকে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে জরিমানা করেছিল বিএসইসি।