চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইটের ঘাটতি, ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে কার্গো ফ্লাইটে কমার্শিয়াল পণ্য পরিবহন না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে তৈরী পোষাক শিল্পের কাঁচামাল, এক্সেসরিজ, মোটর পার্টস, কম্পিউটার পার্টস, রেডিমেড গার্মেন্টস সহ জরুরী পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ঢাকা বিমানবন্দরের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এর ফলে সময় এবং অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রপ্তানিও কমে গেছে। চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হয়। বর্তমানে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
একসময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ার, কুয়েত এয়ার, সিল্ক এয়ারলাইনস, থাই স্মাইলের ফ্লাইট এবং ইত্তেহাদ, এমিরেটসের কার্গো ফ্লাইট চালু ছিলো। চীন, হংকং, ব্যাংকক থেকে এসব ফ্লাইটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কমার্শিয়াল কার্গো আসতো।
কিন্তু ওয়্যারহাউস সংকট সহ নানা কারণে ২০১৫ সালের পর থেকে ক্রমাগত বন্ধ হয় এসব বিমান সংস্থার ফ্লাইট। এর মধ্যে এমিরেটসের কার্গো ফ্লাইট চালু থাকলেও বর্তমানে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্রমাগত বাড়ছে শিল্প কারখানা। চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেডের পাশাপাশি এখন গড়ে উঠছে দেশের বৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর। কর্ণফুলী টানেল ঘিরে সাগরের দুই পাশে দ্রুত বাড়ছে শিল্প কারখানার সংখ্যা। ফলে এই অঞ্চলে এয়ার কার্গোর চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে শিডিউল অনুযায়ী কোন কার্গো ফ্লাইট না থাকায় তারা ভোগান্তিতে রয়েছেন।
তৈরী পোষাক খাতের রপ্তানিকারকরা বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ স্থাপন না হওয়ার কারণে এখানে কার্গো ফ্লাইট নেই। এখান থেকে তৈরী পোষাকের ফিনিশড গুড কার্গো শিপমেন্ট দিতে হলে চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে ঢাকায় নিতে হয়। এমনিতে এয়ারে ফ্রেইট কস্ট বেশি। তার উপর সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া, সেখানে অবস্থান করে এয়ার শিপমেন্ট নিশ্চিত করতে সময়ক্ষেপণ হয়।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এম চৌধুরী সেলিম বলেন, "চট্টগ্রামে কমার্শিয়াল কার্গো না আসায় আমাদের ঢাকা বিমানবন্দরের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এসব কার্গো চট্টগ্রামে আসলে আমাদের সময় এবং খরচ বেঁচে যেতো। ঢাকা থেকে পণ্য আনতে গিয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ দিন সময় নষ্ট হচ্ছে। মাঝেমধ্যে জট লেগে এ সময় আরো দীর্ঘ হয়। যেহেতু চট্টগ্রাম কমার্শিয়াল ক্যাপিটাল তাই অবশ্যই চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু কারা উচিত। থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট হলে আমাদের খরচ অনেক কমবে।"
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গো খালাসে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানান, চট্টগ্রামে কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম শুরু হয় ২০০২ সাল থেকে।
বর্তমানে শুধুমাত্র এমিরেটস-এর কার্গো ফ্লাইট আসে। এছাড়া যাত্রীবাহী বিমানে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে পার্সোনাল ইফেক্ট ( হাউজহোল্ড) পণ্য আসে এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, বাংলাদেশ বিমান, ওমান এয়ারের ফ্লাইটে।
ফিরতি ফ্লাইটে এসব বিমানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, ওমান এবং বাহরাইনে দেশি আলু, কচুর লচি, কচুর ফুল, কচুর মুখি, লেবু, ঝিঙ্গা, শিম, শিমের বিচি, কাঁকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, শসা, শাক সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং দেশীয় ফল কাঁঠাল, লেবু, আম রপ্তানি হয়। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ৩ হাজার মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হয়।
ভয়েজার এভিয়েশন সার্ভিসের ম্যানেজার এবং এমিরেটস ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজের এজেন্ট মোরশেদুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্গো ফ্লাইট চালু করে। ২০১৩ সালে চালু করে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিমান সংস্থা দুটি সপ্তাহে চারটি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে। ২০১৬ সালের পর এমিরেটস চট্টগ্রামে তাদের পরিষেবা ৩ বছর বন্ধ রাখে।
বর্তমানে বিমান সংস্থাটির সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এবং শনিবার দুটি কার্গো ফ্লাইট চালুর অনুমতি রয়েছে। দুবাই-চট্টগ্রাম-ব্যাংকক এবং দুবাই-চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে পণ্য পরিবহন করে এমিরেটস। তবে এই শিডিউল এখন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ অক্টোবরের পর আর কোন ফ্লাইট আসেনি এমিরেটসের। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের কার্গো ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
ভয়েজার এভিয়েশন সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কমার্শিয়াল পণ্য পরিবহনের বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। কারণ বিমানবন্দরের আশপাশে রয়েছে চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেড। এছাড়া কুমিল্লা ইপিজেডের পণ্যও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। কমার্শিয়াল কার্গো চালু করা গেলে বিমান সংস্থা এবং ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে।
এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে কমার্শিয়াল কার্গো পরিবহনের মতো সুবিধা এখনো তৈরী হয়নি। ২০০০ সালের তৈরী ওয়্যারহাউসে ১০০ টন সক্ষমতার কার্গো বিমান আসলেই সেটি ভর্তি হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "কার্গো ভিলেজ কোথায় হবে তার ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করতে আগামী মাসে একটি টিম আসছে চট্টগ্রাম বিমাবন্দরে। এটি চূড়ান্ত হলে কার্গো ভিলেজ নির্মাণ কখন শুরু কিংবা শেষ হবে তা বলা যাবে।"