প্রথমবারের মতো পাইলট ছাড়াই ফ্লাইট সম্পন্ন করল কার্গো প্লেন!
বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত একটি কার্গো প্লেন পুরোপুরি পাইলটবিহীন অবস্থায় একটি ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। কার্গো প্লেনের ইতিহাসে এমন ঘটনা এটিই প্রথম।
ফ্লাইটটি সম্পন্ন হতে সময় লেগেছে মোট ১২ মিনিট। এটি গত নভেম্বরে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় হলিস্টার বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে মোট ৫০ মাইলের যাত্রা সম্পন্ন করে।
এক্ষেত্রে ফ্লাইটটি সার্বিকভাবে পরিচালনা করেছে রিলায়েবল রোবটিক্স। কোম্পানিটি ২০২৯ সাল থেকে সেমি অটোমেটেড ফ্লাইং সিস্টেম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এটি ব্যবহারে দূরবর্তী স্থান থেকেই কার্গো প্লেনটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বিমানটি ছিল সিঙ্গেল ইঞ্জিনের সেসনা ক্যারাভান। এটি ট্রেনিং, পর্যটন, মানবিক মিশন ও আঞ্চলিক কার্গো হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এই বিষয়ে রিলায়েবল রোবটিক্সের সিইও রবার্ট রোস বলেন, "সেসনার পক্ষ থেকে মোট ৩০০ টি ক্যারাভান তৈরি করা হয়েছে। কম্পানিটি এই শিল্পের ওয়ার্কহর্স। কিন্তু এই বিমানের চ্যালেঞ্জ হল, এটি অনেক বড় বিমানের চেয়ে কম উচ্চতায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় উড়ে যায়।"
তাই এটিকে পরিচালনা করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে বিমানগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার সাথে অটোমেশন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
কনসালটিং ফার্ম এভিয়েশন ভ্যালুসের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ৯০০ টি ক্যারাভান চালু রয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮৫ সাল থেকে বর্তমানের ফেডএক্সের ২০০ টির মতো এই বিমান রয়েছে।
এদিকে চালকবিহীন বিমানে রিমোট অপারেটর হিসেবে থাকে একজন মানব পাইলট। তিনি ককপিটে বসে থাকেন। স্যাটেলাইট সিগন্যালের মাধ্যমে প্লেন থেকে নির্দেশনা পাঠান। তবে সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই পাইলট নিজে বিমান চালান না।
রবার্ট রোজ বলেন, "এটা কোনও ভিডিও গেইমস খেলা না। কোন জয়স্টিক নেই এবং আপনার হাতে বিমানটিকে দূর থেকে উড়ানোর ক্ষমতাও নেই। এমন কোনো ভিডিও ফিড নেই যা আপনাকে রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক দেয়। এক্ষেত্রে বিমানটি কোথায় আছে তার উপর ভিত্তি করে রুট পরিবর্তন করতে এক সেট নির্দেশনা পাইলটকে দিতে হয়।
প্রথাগত অটোপাইলটের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, রিলায়েবল রোবটিক্স সিস্টেমও একটি ফ্লাইটের সকল পর্যায় সম্পন্ন করতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে বিমান রানওয়ে দিয়ে ওঠা, অবতরণ, দরজা খোলা ইত্যাদি বিষয়গুলো।
এছাড়াও রোজ জানান, রিলায়েবল রোবটিক্স সিস্টেমে রিমোট অপারেটর রেডিও কলে সাড়া দেওয়া ও ভয়েজ কমিউনিকেশনের বিষয়টি বেশ ভালোভাবে সম্পন্ন করবে। এতে করে মনেই হবে না যে, বিমানে পাইলট হিসেবে কেউ নেই।
বর্তমানে রিলায়েবল রোবটিক্সের পক্ষ থেকে ক্যারাভানের জন্য অনুমতি গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নানা জটিলতায় ধারণা করা হচ্ছে যে, জেট কার্গো বিমানে এটি ব্যবহার করতে ৫ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
রোজ মনে করেন, পাইলটের স্বল্পতা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় স্বয়ংক্রিয় আঞ্চলিক কার্গো প্লেন বেশ ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। তিনি বলেন, "পাইলটের ঘাটতি ছোট বিমানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ বড় বিমানগুলি সমস্ত পাইলটকে নিয়ে নিচ্ছে। তাই ছোট বিমান বহরের সাথে অপারেশন টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পাইলটিং সুদূর ভবিষ্যতে সমস্যাটি দূর করতে পারবে।"
আর নিরাপত্তা প্রশ্নে রোজ বলেন, স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমটি পাইলটের ত্রুটিকে কমিয়ে আনবে। এছাড়াও ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ যাতে হারিয়ে না যায় সেটিতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। বিমানে দুর্ঘটনার পেছনে এগুলোই বেশিরভাগ কারণ।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরলিন ল্যাবস ও এক্সউইং এবং যুক্তরাজ্যের ভোলান্ট কোম্পানিও রিলায়েবল রোবটিক্স প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তিটিকে কার্গো বিমানের সেক্টরে কাজে লাগানোটাই তাদের আশা।
সম্প্রতি পাইলটবিহীন এয়ার ট্যাক্সির ধারণাও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে জার্মান কোম্পানি ভোলোকপ্টার।
এদিকে পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর জ্যাক ডব্লিউ ল্যাঞ্জেলান মনে করেন, রিলায়েবল রোবটিক্স কোম্পানিটি বেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
ডব্লিউ ল্যাঞ্জেলান বলেন, "আমরা সবকিছু অনুমান করতে পারবো না। তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, রোবোটিক পাইলট অন্তত একজন ভালো মানব পাইলটের মতোই সক্ষম। কেননা প্লেন চালানোর সময় এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের সাথে ফিট করাও বেশ কঠিন ব্যাপার।"