টিস্যু পণ্যের উপর ভর করে বসুন্ধরা পেপারের রেকর্ড রেভেনিউ অর্জন
বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপারের মূল ব্যবসা পেপার ও পেপার সামগ্রী হলেও কয়েক বছরের ব্যবধানে টিস্যু পণ্যের ব্যবসায় কোম্পানীটির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আর টিস্যু পণ্যের প্রবৃদ্ধির উপর ভর করেই ২০২১-২২ অর্থবছরে বসুন্ধরা পেপার মিলস প্রায় ১২০০ কোটি টাকার রেকর্ড রেভেনিউ মাইলফলক অর্জন করেছে।
২০২০ সালে করোনা মহামারী আঘাতের পর পেপার পণ্যের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও করোনা মহামারী টিস্যু পণ্যের প্রবৃদ্ধিতে আর্শীবাদ হয়েছে।
কারণ স্কুল-কলেজ এক বছরের বেশি বন্ধ থাকায় পেপার পণ্য বিক্রিতে ধস নামে। অন্যদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিস্যু পণ্যের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয় বলে মনে করেন বসুন্ধরা পেপার মিলসের জেনারেল ম্যানেজার মাজেদুল ইসলাম।
বসুন্ধরা পেপার মিলসের কাগজ, টিস্যু, কাগজের দিস্তা এবং হাইজিন প্রডাক্টস থেকে রেভেনিউ আসে। তবে মূল রেভেনিউ এনে দেয় পেপার এবং টিস্যু পণ্যই।
কোম্পানীর রেভেনিউ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পেপার খাতের ব্যবসার চেয়ে টিস্যু সেগমেন্টে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি।
মাজেদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "করোনার সময় পেপার পণ্যের ব্যবসা কমলেও টিস্যু সেগমেন্টের ব্যবসায় ভালো গ্রোথ হয়েছে। মূলত, করোনা শুরুর পর থেকে টিস্যু খাতের ব্যবসায় উন্নতি শুরু হয়, যা এখনও চলমান।"
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বসুন্ধরা পেপারের নিট রেভেনিউ ৫৬% বেড়ে প্রায় ৩১২ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে কোম্পানির মুনাফা ২০৭% বেড়ে ২০.৯১ কোটি টাকা হয়েছে।
কোম্পানির ডেটা বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানীটির রেভেনিউ গ্রোথ ২১ শতাংশ আর মুনাফায় গ্রোথ ২৩.৪৮ শতাংশ।
আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, মহামারীর মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে টিস্যু পণ্যের রেভেনিউ প্রবৃদ্ধি ৫১ শতাংশ, আর পেপার পণ্যে রেভেনিউ কমে ২৯ শতাংশ।
মহামারির প্রকোপ কমলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে টিস্যু পণ্যের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ৩২ শতাংশ আর পেপার পণ্যে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে টিস্যু সেগমেন্ট থেকে বসুন্ধরা পেপারের রেভেনিউ ছিল ২১৮.২৮ কোটি টাকা, যা মোট রেভেনিউয়ের ২৬%। আর পেপার খাতের রেভেনিউ ছিল ৪৮৩.৯৮ কোটি টাকা, মোট রেভেনিউয়ের প্রায় ৫৯ শতাংশ।
ঠিক দুই বছর পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানী রেভেনিউতে টিস্যু পণ্যের অবদান অনেকটাই পাল্টে গেছে।
মাজেদুল ইসলাম বলেন, "পণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়লেও সেভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যায়নি কিন্তু সেলস ভলিউম বেশির কারণে কোম্পানীর মুনাফায় ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।"
তবে বসুন্ধরার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর সব কাগজ ও টিস্যু পণ্যের গড় দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
তারা বলছেন, কাগজ প্রস্তুতকারীরা সাম্প্রতিক সময়ে হাইজিন এবং টয়লেট্রিজ সামগ্রীতে বিনিয়োগ করছে। উৎপাদন সক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বসুন্ধরা পেপার মিলস, ১৯৯৭ সালে স্থানীয় কাগজ প্রস্তুতকারক হিসাবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।
ওইসময় বসুন্ধরা গ্রুপের আরও দুটি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা নিউজপ্রিন্ট অ্যান্ড ডুপ্লেক্স বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বসুন্ধরা টিস্যু ইন্ডাস্ট্রিজ পেপার খাতের ব্যবসায় যুক্ত ছিল।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠান দুটিকে বসুন্ধরা পেপার মিলের সঙ্গে একীভূত করা হয়, যা এখন স্থানীয় টিস্যু বাজারের প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে।
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এ কোম্পানির ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটগুলো অবস্থিত।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বসুন্ধরা পেপার এখন যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ভারত ও ভুটানসহ ৫০টি দেশে রপ্তানি করা হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে বসুন্ধরা পেপারের রপ্তানি ১৮ শতাংশের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়ে ১১৯ কোটিতে দাঁড়ায়- আগের বছর যা ছিল ১০১ কোটি টাকা।
দ্রুত নগরায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার কারণে স্থানীয় টিস্যুর বাজার এক দশকের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা এখন প্রায় ৮৪ হাজার টন, অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটি ছিল ৩০ হাজার টন।
২০১৮ সালের মার্কেট ডেটা অনুযায়ী, ভোক্তাদের মাথাপিছু টিস্যু কনসাম্পশনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ কেজি।