মহামারির মধ্যেও বেড়েছে টিস্যু, স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের বিক্রি
২০২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে এসে টিস্যু পেপারের বিক্রি বেড়েছে ২০ শতাংশ। একই সময়ে এ জাতীয় অন্যান্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
এ খাতের ব্যবসায়ীদের ভাষ্যে, মহামারিকালে জনসাধারণ অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠায় এসকল পণ্যের বিক্রি বেড়েছে।
যদিও গত বছর দেশব্যাপী ৬৬ দিনের লকডাউনের সময়টাতে টিস্যু পেপার এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা পণ্য যা হাইজিন প্রোডাক্ট বলেই অধিক পরিচিত, তার বিক্রি যৎসামান্যই ছিল। কিন্তু লকডাউন তুলে নেয়ার পরেই এসব পণ্যের চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
শিল্পখাতের সূত্রে জানা যায়, মহামারির আগে টিস্যু পেপারের বিক্রি ছিল গড়পড়তা ধরনের। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং দ্রুত নগরায়ণের ফলে এই শিল্প চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তবে মহামারির আগে থেকেই হাইজিন পণ্যের প্রতি মানুষের চাহিদা উর্ধ্বমুখী ছিল এবং এখন তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিগত এক দশকে দেশের টিস্যু পেপারের বাজার দ্বিগুণ হয়েছে এবং বর্তমানে তা ৫০০ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য হাইজিন পণ্যের বাজার সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
সারা দেশে টিস্যু পেপারের চাহিদার ৯৫ শতাংশই দেশীয় কোম্পানিগুলো পূরণ করে থাকে এবং বাকি ৫ শতাংশ আমদানি করা হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলো টিস্যু পেপার এবং হাইজিন পণ্য প্রায় ২৩ টি দেশে রপ্তানিও করে থাকে।
অতীতে দেশের টিস্যু পেপারের বাজার ছিল পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ১৯৮০ সালের দিকে কল্লোল গ্রুপ সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্য থেকে 'ফে টিস্যু' আমদানি করতে শুরু করে। তখন দেশের রেস্টুরেন্ট এবং পার্টি সেন্টারগুলোতে দেখা যেত ফে টিস্যু পেপার।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে বর্তমানে প্রায় ৪০ টি দেশীয় কোম্পানি টিস্যু পেপার এবং হাইজিন পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত করেছে।
বাংলাদেশে টিস্যু পেপার শিল্পের ক্ষেত্রে পথিকৃৎ বলা যায় বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডকে। নানা ধরনের পণ্যের সমাহার নিয়ে তারা মোট মার্কেট শেয়ারের ৭৫% অধিকার করে রেখেছে এবং ২০% রয়েছে বাদবাকি কোম্পানিগুলোর হাতে।
৮-১০% মার্কেট শেয়ার নিয়ে মেঘনা পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইস্ট এশিয়া গ্রুপের বাংলা টিস্যু, ইউনুস গ্রুপের সোনালি টিস্যু, কল্লোল গ্রুপের ফে টিস্যু, পারসোনা টিস্যু, সফটি টিস্যু এবং ক্যাসপার টিস্যু।
দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে এই কোম্পানিগুলো যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ভারত এবং ভুটানের মত দেশগুলোতে নিজেদের পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ২৩৮ টন টিস্যু পেপার রপ্তানি করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বার্ষিক টিস্যু পেপার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল প্রায় ৮৪ হাজার টন। ২০১৭ অর্থবছরে তা ছিল ৩০ হাজার টন।
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর সর্বশেষ ডেটা থেকে জানা গেছে ২০২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশীয় কোম্পানিগুলো ৪২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের ফেসিয়াল ও টয়লেট টিস্যু, কিচেন টাওয়েল এবং ন্যাপকিন রপ্তানি করেছে।
ইন্ডাস্ট্রি সূত্র জানিয়েছে কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ের চাইতে এখন টিস্যু পেপার ও হাইজিন পণ্যের বাজার বেড়েছে প্রায় ১৫%। বর্তমানে দেশে বার্ষিক মাথাপিছু টিস্যু ব্যবহারের পরিমাণ ৪ দশমিক ১ কিলোগ্রাম।
শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বেই মোট টিস্যু পেপার ও হাইজিন পণ্যের বাজার বেড়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে ২০২০ সালের মধ্যে এর বাজার হবে ৪৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এবং ২০২৭ সালের মধ্যে তা ৫৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
বর্তমানে বাজারে ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, কিচেন টাওয়েল, টেবিল ন্যাপকিন, পেপার ন্যাপকিন, টয়লেট টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়েল সহ নানা ধরনের টিস্যু পাওয়া যাচ্ছে।
বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড এর অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. মাজেদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, টিস্যু পেপারের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে এবং মানুষ এখন কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই টিস্যু পেপার ব্যবহার করছে।
বসুন্ধরা পেপার মিলস বসুন্ধরা গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন। ১৯৯৭ সাল থেকে তারা টিস্যু পেপার উৎপাদন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে তাদের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি করেছে এবং বর্তমানে তারা আট ধরণের টিস্যু পেপার এবং দশ ধরণের হাইজিন পণ্য বাজারজাত করে।
কোভিড-১৯ এর কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বসুন্ধরা কোম্পানির রাজস্ব আয় কমেছে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং তার আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমেছে ২ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অনুযায়ী ২০২১ এ এসে তাদের টিস্যু পেপারের বিক্রি কমেছে ৪৯ শতাংশ। তবে তাদের হাইজিন পণ্যের বিক্রি এক লাফে বেড়ে ১২৬ শতাংশতে এসে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ অর্থবছরে তাদের টিস্যু পেপার রপ্তানি আয় বেড়ে ১৭৮ শতাংশতে দাঁড়িয়েছিল এবং হাইজিন পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছিল ১৬৬%। লকডাউনের পরে তাদের এই আয় আরো বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের টিস্যু পেপারে রাজস্ব আয় কমেছে ৬% যেখানে হাইজিন পণ্যের ক্ষেত্রে তা ১০৮% বেড়ে গিয়েছে।
তবে ২০২১ অর্থবছরের এক চতুর্থাংশে এসে টিস্যু পেপার থেকে তাদের রাজস্ব আয় ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হাইজিন পণ্যের ক্ষেত্রে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৫৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
- সংবাদটি ইংরেজিতে পড়ুন: Tissue, hygiene products sales jump amid pandemic