আন্তঃব্যাংক কলমানি রেট চার মাসের সর্বোচ্চ ৫.৮৩%
নগদ অর্থ উত্তোলনের এক চাপের মুখে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) আন্তঃব্যাংক কলমানি রেট ৫.৮৩% ওঠে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য।
ব্যাংকগুলি সাময়িক চাহিদার প্রেক্ষিতে একে-অপরকে এক রাতের জন্য যে সুদে টাকা ধার দেয় তাই ওভারনাইট বা কলমানি রেট।
বৃহষ্পতিবার কলমানিতে ৩,৭৯২ কোটি টাকা ধার নিয়েছে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে বুধবার যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি এবং মঙ্গলবারে ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার কলমানি বাজারে, ওভারনাইট ভিত্তির লেনদেন ছাড়াও- ৭ দিনের নোটিশে গড়ে ৭.৬৩% সুদে ৫০৫ কোটি এবং দুই সপ্তাহের নোটিশে ৬.০৮% সুদে ৮৩৭ কোটি টাকা ধার নেওয়া হয়েছে।
কলমানি রেট বাড়ার অর্থ- ব্যাংকে তারল্য সংকট নয় বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে বাজারে দরকারি তারল্য সরবরাহ করে সহায়তা দিতে পারবে।
তিনি বলেন, 'আন্তঃব্যাংক পর্যায়ের লেনদেনে দরের ওঠানামা একটি স্বাভাবিক বিষয়'।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এর আগে বিপুল নগদ চাহিদার প্রেক্ষাপটে গত ৭ জুলাই ৫.৮৫% পর্যন্ত বেড়েছিল ওভারনাইট কলমানি রেট। তবে আগের ও পরের দিনগুলোয় এই হার ছিল স্বাভাবিক অবস্থানে। কারণ, নির্দিষ্ট কোনো কার্যদিবসের সাময়িক হারকে ততোটা গুরুত্ব দেন না ব্যাংকাররা।
গত ৭ জুলাইকে ধর্তব্যে না নিলে- ২০১৬ সালের পর কলমানিতে এত বেশি সুদে টাকা ধার হয়নি বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য।
নাম না প্রকাশের শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, কলমানিতে সুদহার বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু এখনো ঘটেনি। অতীতে এরচেয়ে অনেকগুণ বেশি রেটে টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো।
গুজবের কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, এতে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় একটা চাপ তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'যারাই টাকা তুলছেন তারা আসলে বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না। তারল্য সংকটের মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া'।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে ১ লাখ ৭০ হাজার লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে, যা ২০২১ সালের আগস্টে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৫৮৭ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে অরায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করায় ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসেছিল।
বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিজার্ভ থেকে ডলার কেনার কারণে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে। এজন্য তারা কলমানিতে কম সুদে একে-অপরকে টাকা দিতে চাইছে না।
এক ব্যাংক অন্য ব্যাংককে ওভারনাইট ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে রেপো রেটে মতো করে চার্জ করে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা আছে।
তবে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি চার্জ করে ব্যাংকগুলো। ব্যাংক থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা ধার করা বাড়লেও– কলমানি রেট বাড়তে পারে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া দাবি করেন, কলমানি রেট বাড়ার পেছনে এনবিএফআই খাতের কোনো ভূমিকা নেই।
তিনি জানান, ব্যাংকের মতো নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও আমানত প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
"আমরা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি লিকুইডিটি (তারল্য) নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। স্বাধীনতার পর কোনো ব্যাংক বা এনবিএফআই দেওলিয়া হয়নি"- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
ব্যাংকগুলোর নিজেদের চাহিদার কারণের কলমানি রেট বাড়ছে দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা কলমানি থেকে খুব বেশি ধার করছি না। তারল্য নিয়ে চাপের মধ্যে থাকলেও, আমরা প্রদত্ত ঋণগুলো আদায় করে এবং নন-পারফর্মিং লোন লোন কমিয়ে টাকার যোগান সচল রাখার চেষ্টা করছি'।