তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআইএস) খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। নয় মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি ১০ লাখ। যা মোট ঋণের ২৪.৬১ শতাংশ।
২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি সুদে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিয়েছে। যার কারণে এসকল প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পাড়ায় খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে।
এছাড়া কোভিডের কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ বছরে ঋণে পরিশোধে বড় ধরনের ছাড় ছিল। চলতি বছর থেকে ঋণ পরিশোধের ছাড়ের সুবিধা উঠে যাওয়াও খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ।
এদিকে চলতি বছরের জুন শেষে এনবিএফআইগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৩১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭,৩২৭ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এসব প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকেই দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে নতুন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।"
"প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ায় আর্থিক খাতে অনিয়মের জন্য কিছুটা হলেও দায়ী," বলেন তিনি।
তিনি বলেন, "ব্যাংকগুলোকে যেভাবে নজরদারি করা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে, সেভাবে নজরদারি করা হয়নি। সেই সুযোগে জনগণের টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করায় বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।"
"সঠিক সুপারভিশন করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বোঝা কমানো সম্ভব হতো। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে এখনই এ সেক্টরকে নজরদারিতে নেওয়া।"
একদিকে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কার এ সময়টাতে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। গত নয় মাসে মোট ঋণ খেলাপি হয়েছে ৩১,১২২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪.৩৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা বা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এর আগে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১,৮১৬ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮.৯৬ শতাংশ।