অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে চালু হলো অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/01/05/dse_mumitm-7970.jpg)
শেয়ারবাজারে নন-লিস্টেড বা অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেনের জন্য অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং শেয়ার ম্যানিপুলেশন বা কারসাজির সুযোগ থাকায়, শেয়ার কেনার তিনমাসের মধ্যে বিক্রি করে মুনাফা নেওয়া যাবে না। এই লাভের টাকা ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিতে হবে। লাভের টাকা নিতে হলে শেয়ার কেনার তিনমাস পর তা বিক্রি করতে হবে।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) এটিবি উদ্বোধনের দিনে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ৫০০ শেয়ার লেনদেন হয়। এদিন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ওপেনিং প্রাইস থেকে ৩.৩৬ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয় ১৫.৪০ টাকায়। নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিটি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মোট ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোড করবে।
একইদিনে প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ২০০ কোটি টাকার গ্রিন বন্ড তালিকাভুক্ত হয়েছে। তবে বন্ডটির কোনো ইউনিট লেনদেন হয়নি।
এর আগে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলি রুবায়েত-উল-ইসলাম এটিবি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধন অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "নতুন বছর শেয়ারবাজারের জন্য ভালো যাবে বলে আমি আশাবাদী। আরো নতুন প্রোডাক্ট আনার চেষ্টা চলছে।
"কিন্তু রাতারাতিই এর সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলাফল ধীরে ধীরে আসবে," যোগ করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের পরিচালক মাহবুবুল আনাম এবং প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক উজমা চৌধুরী।
ডিএসই সূত্র জানায়, এটিবিতে ৭৬টি ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ১৮টি ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ এবং ১৫টি ডেট সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশে নিবন্ধিত যে কোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। পাশাপাশি বিএসইসির অনুমোদিত ডেট সিকিউরিটিজ, ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড এবং অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এটিবি-তে তালিকাভুক্ত হতে পারবে।
এর জন্য শুধু ডিএসইর তালিকাভুক্তির অনুমোদন লাগবে। তবে ডিএসইর মূল মার্কেটের মতো এটিবি-তে নতুন শেয়ার ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহ করা যাবে না। কেবল স্পন্সর বা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা তাদের অংশ অফলোড বা বিক্রি করতে পারবেন। তবে কোনো অবস্থাতেই কোনো কোম্পানির ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করা করা যাবে না।
আইন অনুযায়ী, এটিবি-তে লেনদেন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজকে অবশ্যই ইলেক্ট্রনিক সিকিউরিটিজে রূপান্তর করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডে রাখতে হবে। এছাড়া, কোম্পানিকে নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ এবং বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হবে।
ডিএসইর মূল মার্কেটে একজন বিনিয়োগকারী যে বেনেফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্ট দিয়ে বিনিয়োগ করেন, সেটি দিয়েই এটিবি থেকে সিকিউরিটিজ কিনতে পারবেন। আর ডিএসইর ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর মাধ্যমে এটিবিতে লেনদেন করা যাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নন-লিস্টেড ফার্মের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়াতেও এ ধরনের মার্কেটের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে সেখানে এ ধরনের সিকিউরিটিজের লেনদেন ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি)-এর মাধ্যমে হয়।
ভারতে নন-লিস্টেড কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। তাই এই ধরনের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সাধারণ এবং ছোট বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহ করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই এই বাজারে বড় ভূমিকা রাখেন বলে জানায় ডিএসই।
নন-লিস্টেড বা অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ বাজার নিয়ন্ত্রিত বা সংগঠিত নয় এবং এই শেয়ারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা সরাসরি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ব্যবসা করেন।
বিএসইসির মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ; তাই এই প্ল্যাটফর্মে শেয়ার কেনার আগে তিনি এসব বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট গবেষণা ও চিন্তাভাবনা করে আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) খন্দকার সাফাত রেজা দ্য বিজিনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এটিবি-তে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন এবং প্রসপেক্টাস পাওয়া যাবে না। তাই এইখানে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ক্লায়েন্টের জন্য এই মার্কেটে যারা তালিকাভুক্ত হবে, তাদের নিয়ে একটি ওয়েব পোর্টাল করবো। যেখানে এই কোম্পানিগুলো নিয়ে তথ্য থাকবে। তা দেখে বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।"
ইক্যুইটি শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথম দুই দিন ৪ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকবে। তৃতীয়দিন লেনদেন বন্ধ থাকবে। এদিন শেয়ার ডিসট্রিবিউশন করা হবে। চতুর্থদিন থেকে ৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকবে।
পাশাপাশি ইক্যুইটি শেয়ার কেনার ৩ মাসের মধ্যে বিক্রি করে মূলধন পাওয়া গেলে সেটি ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ, ওই টাকা নেওয়া যাবে না। লাভের টাকা নিতে হলে শেয়ার কেনার তিনমাস পর তা বিক্রি করতে হবে।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সিইও আরও বলেন, তিনমাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে শেয়ার ম্যানিপুলেশন বা কারসাজি করা কঠিন হবে।
ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে এসেট ম্যানেজারের ঘোষণা করা দামেই হবে কেনা-বেচা।