বাংলাদেশের সক্রিয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট আইএমএফ: বাংলাদেশ ব্যাংক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ)- এর উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, তিনি করোনামহামারি কালে বাংলাদেশের সক্রিয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি চার সদস্যের প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে গত শনিবার ঢাকায় আসে প্রতিনিধি দলটি।
রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাথে প্রতিনিধি দলের পৃথক বৈঠক হয়েছে। সভায় সরকারের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আইএমএফ ডিএমডি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, সভায় আসন্ন মুদ্রানীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময় অর্থনৈতিক প্রতিকূলতাগুলো মোকাবিলায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।
'এছাড়া ক্লাইমেট ফাইন্যান্সিং (জলবায়ু অর্থায়ন) এর একটা প্রস্তাব আইএমএফ আমাদের দিয়েছে। তারা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমরাও আমাদের পদক্ষেপগুলো তাদের সামনে তুলে ধরেছি'।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, তারা সরকারের সাথে যৌথভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন। আইএমএফ এক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক দাতা সংস্থাটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে।
মেজবাউল হক বলেন, 'আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) তাদের জানিয়েছি, তারল্য ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে আমরা কীভাবে সবকিছু ম্যানেজ করছি, তা তাদের জানিয়েছি'।
আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে সভায় আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেছেন, এটা দ্বিপাক্ষিক একটা সভা ছিল। ঋণ প্রসঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। 'নির্দিষ্ট কোনো ইস্যু নিয়ে এই সভা ছিল না। তাদের ঋণদানের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে এগোবে'।
চলতি মাসের ৩১ তারিখে আইএমএফের বোর্ড সভায় ঋণ চূড়ান্ত হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
গত বছরের জুলাইয়ে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে ।
রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাথে বৈঠকে আইএমএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বৈঠকে বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহের করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
২০৩১ সালের নাগাদ বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত স্মার্ট দেশে পরিণত করতে সরকারের লক্ষ্য রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের পর্যাপ্ত সংকুলান নিশ্চিত করতে হবে। 'এক্ষেত্রে বরাবরের মতো আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা কামনা করি'।
বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে ৪শ কোটি ডলার ঋণদানে আইএমএফ প্রাথমিকভাবে সম্মতি দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। এ ঋণ কর্মসূচিতে সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোকে সমর্থন দেওয়ায় আইএমএফের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।