সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কলমানি রেট ৭%
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনায় ওভারনাইট কলমানিতে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ করেছে ব্যাংকগুলো।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না; কলমানি মার্কেট বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ভূমিকা নেই বলেও জানান তিনি।
"বাজারে তারল্যের চাহিদা বাড়ায় এই হার বাড়ছে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ থাকলে এই হারগুলো কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে, মূলত এটিই ঘটছে এখন," যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) এ নির্দেশনার আগে ব্যাংকগুলো ওভারনাইট কলমানিতে ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া সর্বোচ্চ ৬.৭৫ শতাংশ হারে অন্য ব্যাংককে টাকা ধার দিতে পারতো।
এ নিয়ে চলতি মাসেই দুই দফায় ওভারনাইট কলমানি রেট ১২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এক ব্যাংক অন্য ব্যাংককে একদিনের জন্য যে সুদহারে টাকা ধার দেয়, সেটিকে কলমানি রেট বলে। একদিনের বেশি সময়ের জন্য ধার দেওয়া হলে, ব্যাংকগুলো সেসব ধারকে শর্ট নোটিশে ধার বলে গণ্য করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মাসের শুরুতে কলমানিতে টাকা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৫.৭৫ শতাংশ সুদ নিতে পারতো। তবে মার্কেটের ইফেক্টিভ ইন্টারেস্ট রেট বেশি হওয়ায় এত কম সুদহারে অন্য ব্যাংকে ধার দিতে চাইতো না ব্যাংকগুলো। তারা ঝুঁকে পড়ছিল বেশি সুদের শর্ট নোটিশের ধারে। পরে কলমানি মার্কেটকে সক্রিয় করতে গত ৫ জানুয়ারি প্রথম দফায় মৌখিকভাবে ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ওভারনাইট ধারের ক্ষেত্রে ৬.৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে সেটিও পর্যাপ্ত হচ্ছিল না। শর্ট নোটিশের ধারে সুদের হার সাড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে শর্ট নোটিশে ৯ শতাংশের বেশি সুদ না নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ, মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোকে ওভারনাইট ইন্টারেস্ট রেট ৭ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নির্দেশনার কারণে এভারেজ ওভারনাইট রেট বুধবার গত সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৭ শতাংশে পৌঁছায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২ মে থেকে পাওয়া কলমানি রেটের ডেটা অনুযায়ী, গত সাড়ে ৬ বছরেরও বেশি সময়ে এতো বেশি রেটে ওভারনাইট লোন দিতে দেখা যায়নি।
ডিসেম্বর মাসের বেশিরভাগ দিনই ওভারনাইট কলমানি মার্কেটে ৩ হাজার কোটি টাকার নিচে ধার দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কলমানি রেট বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়ায় জানুয়ারি মাসে লেনদেন অনেক বেড়েছে। এরমধ্যে কোনো কোনো দিন দৈনিক ধার ৫ হাজার কোটি টাকাও পার করেছে।
সাধারণত সুদের হার বাড়লে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমে। কিন্তু ওভারনাইট কলমানির ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। সুদের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঋণ।
বুধবার ব্যাংকগুলো গড়ে ৭ শতাংশ সুদে ৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ওভারনাইট ঋণ দিয়েছে। শর্ট নোটিশে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের গড় হার সাড়ে ৭ থেকে ৮.২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম ১৪ দিনের শর্ট নোটিশ; এক্ষেত্রে গড় সুদের হার মাত্র ৫.৮৬ শতাংশ।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান জানান, অনেক ব্যাংক নিজেদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে কম সুদে ধার দেয়। ১৪ দিনের শর্ট নোটিশেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা তাদের।
রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, সাধারণত রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর লিকুইডিটি বা তারল্য বেশি থাকলে, কলমানি রেট কম থাকে। গত ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো নিয়মিত ওভারনাইট ধার দিয়েছে। তখন ০.১০ শতাংশ কলমানি রেটও দেখা গেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির দাম পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় প্রতিদিন ডলার কেনার কারণে বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে টাকার কিছুটা সংকট চলছে; ফলে ব্যাংকগুলোকে ওভারনাইট লোন নিতে হচ্ছে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, কলমানি থেকে ধার নিয়ে অনেক বেশি সুদ দিতে হচ্ছে বলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, এই রেট বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোকে সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ঋণের ৯ শতাংশ ক্যাপ শিথিল করা বা তুলে দেওয়া উচিত মন্তব্য করে অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার বলেন, "আমরা ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়ে ডিপোজিটের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে লোনে ক্যাপ থাকায় সেটি খুব বেশি বাড়ানো আমাদের জন্য কঠিন।"