৮ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বিদেশি ব্যাংকগুলো
অর্থবছরের প্রথম আট মাসের মধ্যেই কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করেছে বিদেশি ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে কার্যরত ৮টি বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংককে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৭৭১ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়।
২০২২ সালের জুলাই থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৭৭৪ কোটি টাকা। ফলে অর্থবছর শেষ হওয়ার ৪ মাস আগেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে ব্যাংকগুলো।
ফেব্রুয়ারি মাসের কৃষিঋণ বিতরণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারি শেষেই ৪টি বিদেশি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলে। ফেব্রুয়ারি শেষে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭টি-তে।
সবচেয়ে বেশি ৪০২ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ৮০% লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে, এটি অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন করে ৩টি বিদেশি ব্যাংক যোগ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করা ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। এর বিপরীতে আবার ১২টি ব্যাংক এমনও আছে যারা লক্ষ্যমাত্রার ৫০% ও বিতরণ করতে পারেনি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১০%ও বিতরণ করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক খাতে ৩০,৯১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশের ব্যাংকগুলো ২১,০৬৭ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৬৮.১৫% ঋণ বিতরণ করেছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ১,৫৩৭ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ করলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়েছে। গত অর্থবছরে ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ৬৮.৭৯% অর্জন করতে পেরেছিল ব্যাংকগুলো।
অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষিঋণের চাহিদা থাকে উল্লেখ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, "এই সময়টাই আসলে পিক সিজন। আমাদের মূল ডিসবার্সমেন্ট এই সময়েই হয়। তবে যেসব ব্যাংক বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ দূরে আছে, তারা মূলত গ্রামাঞ্চলে ব্রাঞ্চ না থাকার কারণে টার্গেট এচিভ করতে পারছে না। এছাড়া এই লোনগুলো ডিসবার্স করতে অপারেটিং কস্টও অনেক বেশি হয়।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, যেসব ব্যাংক অর্থবছর শেষে টার্গেট অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারে না, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়।
আগে এসব ব্যাংককে জরিমানা করা হতো। এখন একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এই ফান্ডে লক্ষ্যমাত্রার বাকি টাকা জমা করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারবে না, তাদের কাছে থেকে লক্ষ্যমাত্রার বাকি টাকা নিয়ে ঋণ বিতরণে সক্ষম ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হবে।
ব্যাংক সাধারণত মূল ব্রাঞ্চ, এজেন্ট ব্যাংকিং ও এনজিও এর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে। সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা কৃষিঋণের ইন্টারেস্ট রেট ৮%, যেখানে এনজিও ২৪% পর্যন্ত ইন্টারেস্ট নিচ্ছে। দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা কৃষিঋণের প্রায় ৫০-৬০%-ই বিতরণ করা হয় এনজিও এর মাধ্যমে।