উপকূল রেহাই পেলেও অর্থনীতি বিপর্যস্ত করে দিয়ে গেল মোখা
বন্দরে কর্মব্যস্ততা নেই, খাবার রান্না করার জন্য নেই গ্যাস, কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, বিমানের ফ্লাইট বাতিল, ঘন ঘন লোডশেডিং—এই হলো ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র পেতে আরেকটু সময় লাগবে। তবে আঘাত হানার আগেই এই ঘূর্ণিঝড় অনেক দুর্বলতা স্পষ্ট প্রকাশ করে দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানলেও তার প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও।
ঢাকাবাসীরা শনি ও রোববার ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন।
সতর্কতা হিসেবে কর্তৃপক্ষ সাগরে ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বন্ধ করে ভাসমান রিগ্যাসিফিকেশন ফ্যাসিলিটিগুলো গতকাল গভীর সাগরে নিয়ে গেছে।
এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন তাৎক্ষণিকভাবে কমে গেছে। ফলে শনিবার দেশজুড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
গ্যাস সংকটের ফলে অসংখ্য কারখানা কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে শুরু করে।
ক্ষতির মাত্রা কমাতে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি দুটোই দুদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে সময়ের ক্ষতিতেও পড়েছেন।
রোববার বিকালে বাংলাদেশ অতিক্রম করার আগে তীব্রতা হারানো ঘূর্ণিঝড়টি সেন্ট মার্টিনে গাছপালা উপড়ে ফেলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ঘরবাড়ি। দেশের অর্থনীতির চাকাও মন্থর হয়ে গিয়েছিল মোখার প্রভাবে। ছেদ পড়েছে মানুষের নিত্যদিনের রুটিনে।
স্থবির বন্দর
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম।
ফলে ডেলিভারি হয়নি বন্দর ইয়ার্ডের ৭৫ ভাগ স্থান দখল করে রাখা প্রায় ৪০ হাজার ৫৫৮ টিইইউ (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার)।
এছাড়া বন্দর জেটি ও বহির্নোঙর থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৭৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ। পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় প্রায় ২৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন নিত্য প্রয়োজনীয় ও শিল্প পণ্য নিয়ে সাগরে ভাসছে এসব জাহাজ।
আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, রোববার পর্যন্ত ১৯টি আইসিডিতে ৬ হাজার ৭২০ টিইইউ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের অপেক্ষায় আছে।
এর মধ্যে ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক এবং বাকি ২০ শতাংশ পাট, বেভারেজ ফুডসহ অন্যান্য পণ্য।
এসব রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর, যেমন সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং হয়ে মাদার ভেসেলে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হতে পারে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, এই বিপর্যয়ের কারণে রপ্তানি পণ্য পৌঁছাতে শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
এর ফলে সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে রপ্তানি পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি।
আবদুল মোনেম গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের অপরিশোধিত চিনি খালাস শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের খালাস কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
আবদুল মোনেম গ্রুপের মতো বড় বড় শিল্প গ্রুপের আমদানি করা নিত্য প্রয়োজনীয় এবং শিল্পের কাঁচামাল খালাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্দর সচল হলে জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরে জাহাজ জট তৈরি হবে। এই সংকট কাটাতে চট্টগ্রাম বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে খোলা পণ্যবাহী জাহাজ খালাস করলে জট এড়ানো সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, জাহাজে পণ্য খালাস, শিপমেন্ট, ডেলিভারিসহ বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম দুই দিন বন্ধ থাকায় কিছুটা অসুবিধা হবে। তবে অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দেশের সাপ্লাই চেনে বিপর্যয় নেমে আসবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি মূল্য বেড়ে যাবে। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।'
বন্ধ কারখানার চাকা
চট্টগ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ ভারী শিল্পের বেশিরভাগেরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় শনি ও রোববার।
রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২ হাজার ১০০ টন। কিন্তু গ্যাস সংকটরে কারণে শুক্রবার থেকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্রুপটির সিইও মেহেরুল করিম বলেন, 'মোখার প্রভাবে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য শিল্পকারখানার মত আমাদেরও উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। মোখার প্রভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারখানা চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।'
দেশের শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম। প্রতিষ্ঠানটির দুটি কারখানায় দৈনিক রড উৎপাদনের সক্ষমতা ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। মোখার প্রভাবে কারখানা দুটিতে শুক্রবার থেকে গ্যাস সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
লোকসান কমাতে ফার্নেস অয়েল ও লিকুইড ডিজেল অয়েল (এলডিএল) দিয়ে কোনোমতে কারখানা দুটি উৎপাদন চালু রেখেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন নেমে এসেছে সক্ষমতার ৪০ শতাংশে।
একইভাবে গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কোম্পানিটির চারটি বিলেট কারখানায়ও।
বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেন গুপ্ত বলেন, 'শুক্রবার থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ দুটিরই সংকট চলছে। কোনো কোনো কারখানায় বিদ্যুৎ থাকলেও গ্যাসের অভাবে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।'
ইস্পাত কারখানা মালিকদের অবস্থাও আলাদা নয়।
চট্টগ্রামের জিপিএইচ ইস্পাতের দুটি ইউনিটে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন রড উৎপাদন হয়। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে জিপিএইচ কর্তৃপক্ষ।
জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল টিবিএসকে বলেন, 'গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে আমাদের দুটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ রেখেছি। গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন চালু রাখা যাচ্ছে না। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয়।'
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর (বিজিএমইএ) সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা শুক্রবার বিকেলের পর বন্ধ করে দিয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের জরুরি শিপমেন্ট আছে সেগুলো নিজ উদ্যোগে বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কোনোভাবে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কারখানা মালিকরা।
ভুগছে ইপিজেডগুলোও
গ্যাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ কারখানা রোববার ছুটি ঘোষণা করেছে বলে নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) কর্তৃপক্ষ ।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান বলেন, 'মোখার প্রভাবে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইপিজেডের অভ্যন্তরীণ ৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যেসব কারখানার ইমার্জেন্সি শিপমেন্ট শিডিউল রয়েছে সেসব কারখানা নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে চালু রেখেছে।'
বন্ধ রান্নাবান্না
রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার তৈরি করতে যান ফারহানা।
কিন্তু রান্নাঘরে চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখেন লাইনে গ্যাস নেই। তখন তিনি স্বামীকে বলেন পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসতে।
কিন্তু রেস্টুরেন্টেও খাবার পাননি। কারণ গ্যাস সংকটের কারণে হোটেলগুলোতেও রান্না হয়নি।
দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাস সংকটে ভুগছে গোটা চট্টগ্রাম নগরী।
রোববার সকালে সরবরা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার (১২ মে) শুরু হওয়া গ্যাস সংকট আরও ঘনীভূত হয়।
নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার খোয়াজা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ফজরের নামাজের পর থেকে খাবারের খোঁজে আসছে মানুষ। কিন্তু লাইনে গ্যাস না থাকায় হোটেলে রান্না সম্ভব হয়নি।
'মানুষের ছোটাছুটি দেখে আমরা এখন সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না করছি। তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ রান্না হয়, গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সে পরিমাণ রান্না করা সম্ভব নয়।'
অনেককে আবার খালি হাতেও ফিরতে হয় হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে। বিস্কুট, চিড়া, মুড়ির মতো শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয় তাদের।
গ্যাস না থাকায় অনেকে বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস, ইলেকট্রিক চুলা, রাইস কুকার ব্যবহার করেছে। কেউ কেউ স্টোভ, ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলিও ব্যবহার করেছে। চাহিদা বাড়ায় এসব পণ্যের দামও গেছে বেড়ে।
বন্দর নগরীর ক্রোক্রারিজ পণ্যের পাইকারি বাজার গোলাম রসুল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রোক্রারিজ দোকানগুলোতে ইলেকট্রিক চুলা ও রাইস কুকার কিনতে মানুষের ভিড়। এতে মানভেদে প্রতিটি ইলেকট্রিক চুলায় ৩০০-৫০০ টাকা এবং রাইস কুকারে ২০০-৩০০ টাকা পর্য়ন্ত দাম বেড়ে গেছে।
ইলেকট্রিক চুলার জন্য বেশি উপযোগী হওয়ায় এই সুযোগে বেড়ে গেছে নন-স্টিক পাতিলের দামও।
এদিকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় সিএনজিচালিত গণপরিবহন। এতে সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী নারী-পুরুষ।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা লিটন চৌধুরী বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে রাহাত্তারপুল থেকে অলংকার যেতে সর্বোচ্চ ২০ টাকা ভাড়া লাগলেও এখন রিক্সায় যেতে ভাড়া হাঁকাচ্ছে ২০০ টাকা।'
উত্তরাঞ্চলেও প্রভাব পড়েছে
গত কয়েক দিন যাবত লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল। শনি ও রোববার বিদ্যুতের লোডশেডিং কিছুটা কমেছে। কিন্তু জেলা শহরে গ্যাসের লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে।
সদর উপজেলার বশিকপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবরিন আক্তার জানান, শুক্রবার পর্যন্ত দিনে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল। তবে শনিবার ও রোববার লোডশেডিং কমেছে।
তবে কী কারণে লোডশেডিং কমেছে, তা জানেন না তিনি।
লক্ষ্মীপুর পল্লীবিদুতের জিএম জাকির হোসেন বলেন, 'বর্তমানে পিকআওয়ারে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮০ মেগাওয়াট। সেখানে প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামী কয়েক দিনে চাহিদা আরও কমবে। কারণ, ধান খেতে সেচ দিতে হচ্ছে না, তাপমাত্রা কমে গেছে। ফলে চহিদা কমেছে।'
বাখরাবাদ গ্যাস লক্ষ্মীপুরের ব্যবস্থাপক এসএম জাহিদুল আসলাম বলে, 'লক্ষ্মীপুরে ফেনী থেকে ১৫০ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ হয়। এর মাঝে নোয়াখালী জেলা এবং পথে ১৩টি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস দেওয়ার পর পাইপের শেষ মাথা লক্ষ্মীপুরে মাত্র ৭-৮ পিএসআই গ্যাস পাওয়া যায়।
'এই চাপের গ্যাস দিয়ে জেলার গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা যায় না বিধায় লক্ষ্মীপুরে সবসময় গ্যাসের সমস্যা চলে আসছে।'
একই অবস্থা বিরাজ করছে বগুড়ায়ও।
বগুড়া নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক, প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বেশ কয়েকটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে বগুড়াসহ দেশের অনেক স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।'
দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক মনোয়ারুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।
'এছাড়া রামপালে কয়লা সংকট এবং ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় এই লোডশেডিং সাময়িক। গ্রাহকদের দুর্ভোগ কমাতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা হচ্ছে।'
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী যা বলছেন
রোববার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দুই দিনের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ ও লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
তবে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ দিন। রোববার (১৪ মে) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোখায় একটি ভাসমান এলএনজি স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)-এর পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাইপলাইনটি পুনরায় মেরামত করতে ১০-১২ দিন লাগতে পারে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে''
ঘূর্ণিঝড়টি মানুষের জীবন ও সম্পদের কোনো ক্ষতি না করেই চলে গেছে। কিন্তু ব্যবসার উপর—বন্দর থেকে শিল্প পর্যন্ত—এর প্রভাব থাকবে এবং সম্ভবত আগামী দিনে এই প্রভাব তীব্রও হতে পারে।