অধরাই থেকে যাবে বাড়ি করার স্বপ্ন
নতুন অর্থবছর থেকে ঢাকার গুলশানে এক কাঠা জমি কিনতে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। উত্তরাতে জমি কিনতেও কাঠা প্রতি দিতে হবে ১২ লাখ টাকা অথবা মোট দামের ৮ শতাংশ। ট্যাক্সের এ হার বিদ্যমান রেটের দ্বিগুণ।
জমি কিনে বাড়ি বানাতে গেলে সিমেন্ট, রড, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারেও গুণতে হবে অতিরিক্ত খরচ। কারণ শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ায় দাম বাড়বে এসব উপকরণে।
বাড়ি বানাতে বেশি খরচ হবে তাই ফ্ল্যাট কিনতে চাইলেও দিতে হবে বেশি ট্যাক্স। জুলাই মাস থেকে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা বিল্ডিং কিনতে গেলে প্রতি স্কয়ার ফিটে ৮০০ টাকা বা মোট ৮ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে ক্রেতাকে। এটিও বিদ্যমান করের দ্বিগুণ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য এমন করহার নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তবে ভূমি, ফ্ল্যাটে এমন বিপুল করারোপের ফলে মূল্য লুকিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্তের বাড়ি করার স্বপ্ন আরো ফিকে হবে বলে মনে করছেন রিয়েল এস্টেট সংশ্লিষ্টরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, "রেজিস্ট্রেশনের খরচ বেড়ে গেলে ক্রেতা ও বিক্রেতারা তাদের নথিতে প্রকৃত দাম প্রকাশ নাও করতে পারে, যার ফলে অপ্রকাশিত অর্থ বেড়ে যায়। এতে অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইনফরমাল থেকে যায়।"
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের উপর গেইন ট্যাক্স বর্তমান ৪% থেকে বাড়িয়ে ৮% করা হবে। সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ের পৌরসভার অন্যান্য এলাকায় এই হার বর্তমানের ৩% থেকে বাড়িয়ে ৬% করা হবে। উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভার ক্ষেত্রে ৪% এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ১% এর পরিবর্তে ২% কর হার প্রযোজ্য হবে।
বর্তমানে, জমি রেজিস্ট্রেশন খরচের মধ্যে রয়েছে ১% রেজিস্ট্রেশন ফি, ১.৫% স্ট্যাম্প ডিউটি, ২% স্থানীয় সরকার কর, এবং ৪% বা ৩% গেইন ট্যাক্স।
জমি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি ব্যয় বাড়বে বাড়ি নির্মাণেও। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বস্তা প্রতি ৩০ টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিসিএমএ-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শহিদুল্লাহ।
তিনি বলেন, "আমদানি শুল্ক টন প্রতি ২০০ টাকা বাড়লেও এর সঙ্গে সোর্স ট্যাক্স, ভ্যাট যুক্ত হয়ে ইমপ্যাক্ট হবে মাল্টিপল। ফলে প্রতিব্যাগ সিমেন্টে কমপক্ষে ৩০ টাকা বাড়াতে হবে।"
সিমেন্ট ছাড়াও দাম বাড়ছে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি টাইলস আমদানিতে। এ খাতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশি টাইলসের দাম বাড়তে পারে।
এছাড়া লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কম পক্ষে ১০-১২টি পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম বাড়লে ব্যয় বাড়বে বাড়ি নির্মাণে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এসব পণ্যের দাম বাড়লে বাড়ি নির্মাণ ব্যয় ৫-৭ শতাংশ বেড়ে যাবে।
"এর প্রভাব পড়বে ফ্ল্যাট ক্রেতার উপর। এই সব পণ্যের দাম সহনশীল না রাখলে আবাসন শিল্পে সংকট তৈরি হবে," বলেন তিনি।