অলিম্পিকের বোর্ড সদস্য হলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের দ্বিতীয় প্রজন্ম
দেশের শীর্ষস্থানীয় বিস্কুট উৎপাদক – অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক পর্ষদে নিয়োগ পেয়েছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পুত্র ও ভাতিজা। এর মাধ্যমে তার দ্বিতীয় প্রজন্ম অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায় যুক্ত হলো।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৩.২৯ শতাংশ অংশীদারত্ব থাকা প্রতিষ্ঠান এমবি লিমিটেড আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে আসরার আজিজ এম ভাইকে বোর্ড সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়। একইসঙ্গে তার প্রয়াত সহোদর - রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে আহাদ মোহাম্মদ ভাইকে শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টর হিসেবে মনোনিত করা হয়।
আহাদ বর্তমানে অন-ডিমান্ড ভিডিও স্ট্রিমিং সেবাদাতা বঙ্গ বিডি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে রয়েছেন। আসরারের বর্তমান পেশা সম্পর্কে জানা যায়নি।
১৯৭৯ সালে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাবা মরহুম মোহাম্মদ ভাই বেঙ্গল কার্বাইড লিমিটেড নামে একটি ব্যাটারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে কোম্পানি বিস্কুট প্রস্তুতের ব্যবসায় আসে।
মোহাম্মদ ভাই এরপর নিজের ছেলেমেয়েদের কোম্পানির মালিকানায় যুক্ত করতে থাকেন। এছাড়া, কোম্পানি পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তার ভাই মোবারক আলীকে নিয়োগ দেন।
২০১৮ সালে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ভাই মারা যান। এরপর আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া তার পরিবারের কোনো সদস্য কোম্পানির পরিচালক বোর্ডে ছিলেন না।
তবে মোবারক আলীর ছেলে মুনির আলী ইতোমধ্যেই কোম্পানিতে যোগ দিয়েছেন। চলতি বছরেই মোবারক আলী মারা গেছেন।
কোম্পানির সূত্রগুলো জানায়, অলিম্পিকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। কোম্পানির পরিচালক আজিজ মোহাম্মদ ভাই থাইল্যান্ডে বসবাস করছেন। তিনি কোম্পানির কোনো সভাতেও যোগ দিচ্ছেন না।
মৃত্যুর আগপর্যন্ত কোম্পানি পরিচালনা করেছেন মোবারক আলী। বর্তমানে এদিকটি সামলাচ্ছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাগিনা সামাদ মিরালী। এখন তার ছেলে ও ভাতিজার নিয়োগের মধ্যে দিয়ে বোর্ড পূর্ণাঙ্গ রূপ নিতে চলেছে।
তবে নতুন এই পরিচালকদের মন্তব্য জানতে, তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
গত তিন বছরে ব্যবসার বহুমুখীকরণ ও সম্প্রসারণে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
অলিম্পিকের বিষয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজ তাদের পুঁজিবাজার বিষয়ক নোটে জানায়, উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানিটি ইনস্ট্যান্ট ন্যুডলস, ড্রাই কেক, সফট কেক, চকলেট ওয়েফার, ফিলড ক্যান্ডি, টফি, টোস্ট, রাস্কসহ নানান মুখোরোচক নাস্তা তৈরির মতো সেগমেন্টে বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের কৌশলকেই তুলে ধরছে।
এর আগে একটি ব্রোকারেজ ফার্মের গবেষক জানান, বিনিয়োগকারীরা অলিম্পিকের শেয়ারকে একটি ভালো মৌলভিত্তির বলে মনে করেন। তবে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চিয়তার কারণে পুঁজিবাজারে যে মন্দাভাব দেখা দেয়, তাতে কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য ৫০ শতাংশের বেশি কমে যায়।
তবে অর্থনৈতিক সংকটে অলিম্পিকের ব্যবসা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং সংকটের মধ্যেও তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখে। এতে তাদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে - যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ অটো বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ব্রেড ও বিস্কুট কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির তথ্যমতে, স্নাকস শিল্পে ২২ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে অলিম্পিক। অটো-বিস্কিট প্রস্তুতকারক শিল্পের স্থানীয় বাজারে তাদের দখল প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ।
উদ্বেগ রয়েছে যেসব বিষয়ে
দেশে ইনস্ট্যান্ট ন্যুডলসের বাজার যখন নেসলে (ম্যাগি), ইউনিলিভার (কেনর), নিউজিল্যান্ড ডেইরি (ডুডলস), প্রাণ (মি. ন্যুডলস) ও বসুন্ধরার মতো বৃহৎ প্রতিযোগীদের পণ্যে সয়লাব – ঠিক তখনই একটি ন্যুডলস প্রোডাকশন লাইন চালু করেছে অলিম্পিক। প্রাথমিকভাবে এর উৎপাদন সক্ষমতা ৮,৩১৬ টন। বর্তমানে তারা এটির সক্ষমতা বাড়িয়ে ১৯,০০৮ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
তবে বড় পরিকল্পনা থাকলেও, তার সাথে এই খাত থেকে হওয়া আয়ের সামঞ্জস্য নেই।
এছাড়া, ইবিএল সিকিউরিটিজ জানিয়েছে যে, কোম্পানির বার্ষিক রাজস্বে মাত্র ২৫০ কোটি টাকার অবদান যোগ করবে অলিম্পিকের বিস্কুট ও কাপ কেক উৎপাদক ইউনিট। ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের আয় ছিল ২,১৪৩ কোটি টাকা।
ইবিএলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যাচ্ছে, অলিম্পিকের ব্যবস্থাপকরা কোম্পানিটি বিক্রির ইচ্ছে পোষণ করেছেন। তবে শেয়ারের উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতাপক্ষের সাথে চুক্তি হয়নি। এই ধরনের গুঞ্জন কোম্পানির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরাবে এবং তার ফলে সম্ভাব্য লোকসানের ঝুঁকি তৈরি হবে।