এক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের চেয়ে খেলাপি বেশি ১৩৪৩ কোটি টাকা
নানা কেলেঙ্গারিতে জড়িত নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই তহবিল সংকটে ভুগছে। এর উপর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গত ১২ মাসে খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণের চেয়ে উদ্বেগজনক হারে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ২০২২ এর মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ হয়েছে ২২৭৯ কোটি টাকা। যদিও এই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬২২ কোটি টাকা।
এছাড়া চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০৩৩ কোটি টাকা; যদিও এই সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ৮২৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংকটসহ নানা কারণে ঋণ তেমন বাড়ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ননা সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণের হার এখনও কম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব খেলাপি ঋণ আরও বেশি।
তারা বলেন, ঋণের চেয়ে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান। বিশেষ করে তহবিল সংকটের কারণে টিকে থাকার তাগিদে এসব প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ আদায়ের চেষ্টা জোরদার করেছে।
চলতি বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১২৬৫ কোটি টাকা এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭৮৫৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৫.০৫%।
গত ২০২২ এর ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০৪৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬৮২১ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৩.৮৮%।
আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার টিবিএসকে বলেন, "কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পূর্বের ঋণ বিতরণে কিছু সমস্যা থাকায় এখন সেসমস্ত ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী। যার কারণে তাদের ঋণ বিতরণ কম।"
"এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের এমন জায়গায় ঋণ বিতরণ হয়েছে যেগুলো আদায়ের সম্ভবনা কম। এগুলো নিয়মিত খেলাপি হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে," বলেন তিনি।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, ও আমদানি ব্যয় বাড়ায় গ্রাহকের আমনত কমে যাচ্ছে। এছাড়া আর্থিক ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক ইন্টারেস্ট রেট বেশি না হওয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমানত পাচ্ছে না। যার কারণে নতুন করে ঋণ বিতরণ কম হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
ব্যাংকের ন্যায় গত তিন বছর যাবৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানা ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০২০-২১ সালে কোভিডের কারণে ছাড় দেওয়া হয়।
২০২২ এর শুরুতে ছাড় তুলে নিলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এ বছরেও ঋণ পরিশোধে ছাড় পায় গ্রাহকরা।
২০২৩ এর শুরু থেকে ঋণ পরিশোধের শিথিলতা তুলে ফেললেও তার উপর স্থির থাকতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের (এপ্রিল-জুন) পর্যন্ত টার্ম লোন ও চলতি মূলধনী পরিশোধিত ঋণের মাত্র ৫০% পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্তি পাবেন গ্রাহকরা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে চলতি বছরের মার্চে প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কমেছে ৫৪ কোটি টাকা। মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩,৬৯৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ সম্প্রতি টিবিএসকে বলেন, "আমাদের মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেশি, তাই মানুষের নিয়মিত ব্যয় মেটাতে আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন। সে কারণেই মার্চ প্রান্তিকে এই খাত থেকে নগদ উত্তোলনের চাপ বেশি ছিল।"
এদিকে চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।
মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১,৩১,৬২০ টাকা, যা মোট বকেয়া ঋণের ৮.৮০%।