৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে সেপ্টেম্বরে
গত ৩৫ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এলসি খোলার পরিমাণও আগস্টের তুলনায় প্রায় ১৬.১% কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এলসি সেটেলমেন্ট বা আমদানি পেমেন্ট সেপ্টেম্বরে ছিল ৪.৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বনিম্ন।
সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলো ৪.৬৯ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছে, যা আগস্টে ছিল ৫.৫৯ বিলিয়ন ডলার।
বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেমেন্টের চাপ কমাতে গত এক বছর ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খোলা কমিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, "বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তার একটা আভাস আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ দেখলেই পাওয়া যাবে। ডলারের সংকটের কারণে ক্যাপিটাল মেশিনারি, মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ভবিষ্যতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। ব্যাংকগুলোরও কিছু করার নেই কারণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই।"
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "এখন যে পেমেন্ট করা হচ্ছে তার একটি বড় অংশ ছয় মাস আগে খোলা ডিফার্ড এলসি পেমেন্ট। সাইট এলসি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। এসব এলসি খোলার এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। ব্যাংকের কাছে এখন আগে খোলা ডিফার্ড এলসির ম্যাচিউরিটি পোর্টফোলিও রয়েছে, যে অনুসারে তারা পেমেন্টের সময় নির্ধারণ করছে।"
রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "আমাদের ডলারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৫০০-৬০০ মিলিয়ন ডলার কম। এর ফলস্বরূপ আমরা সহজে এলসি খুলছি না। আমার নিজের ব্যাংকে যেসব এলসি খোলা হয়েছে তার ৯০%ই ডিফার্ড ছিল।"
বেশিরভাগ ব্যাংকই সাইট এলসির পরিবর্তে ডিফার্ড এলসি খুলছে উল্লেখ করে এক ব্যাংক পলিসি অফিসার জানান, ব্যাংকগুলোর কাছে সাইট এলসি খোলার জন্য ডলার নেই।
"ব্যাংকগুলো এখন ডলারের প্রবাহ বজায় রাখার জন্য ডিফার্ড এলসি খুলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই এলসিগুলো ৪-৬ মাসের জন্য খোলা হয়। তবে, ব্যাংকগুলো এরচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ডিফার্ড এলসি খুলছে। এর ফলে ভবিষ্যতে এসব পেমেন্ট বকেয়া হবে, যা রিজার্ভের উপর চাপ বাড়াবে," বলেন তিনি।
আরেকজন ব্যাংকার বলেন, "জুলাই ও আগস্টে ব্যাংকগুলোর ডলারের তারল্য ভালো ছিল। সেপ্টেম্বরে তারল্য কিছুটা কমেছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তা ভালো। ব্যাংকগুলো এখন এলসি খোলার ব্যাপারে খুবই সতর্ক। তাদের মতে, আগামী দিনে ডলারের অবস্থা কেমন হবে তা বোঝা যাচ্ছে না।"
"এখন আমরা ২৭০ দিন বা নয় মাসের জন্য ডিফার্ড এলসি খুলতেও দেখছি," বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, "এই এলসিগুলোর পেমেন্ট ১০ থেকে সাড়ে ১০ মাস পরে করতে হয়। দেরিতে পরিশোধের কারণে আলাদাভাবে মার্কিন ডলারে সুদ দিতে হয় এবং সুদের উপর ২০% ট্যাক্স এনবিআরকে দিতে হয়। এই খরচটাও আলাদাভাবে পণ্যের দামের সঙ্গে যোগ হবে।"
এদিকে, বিশ্বব্যাপী সুদের হার বাড়ছে। বর্তমান বাজেটে সুদের অর্থ প্রদানের উপর আরোপিত ২০% 'উইথহোল্ডিং ট্যাক্স' বিদেশি ঋণকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলেছে। ঋণের খরচ প্রায় ১১% বেড়েছে।