দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধিতে সৌদি আরব সফরে ব্যবসায়ীদের বৃহৎ প্রতিনিধিদল
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে গতকাল (রবিবার) একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে৷ এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা দেশটির সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং নতুন সুযোগ তৈরির চেষ্টা করবেন।
গত মার্চ থেকেই ঢাকা ও রিয়াদের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতার সুযোগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল-কাসাবির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সরকার এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করেছিলেন।
তখন সৌদি আরব বাংলাদেশের জ্বালানি, সমুদ্রবন্দর ও কৃষি শিল্পে বিনিয়োগের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এছাড়াও দুই দেশের চেম্বার অব কমার্স দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক তদারকির জন্য একটি যৌথ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে৷
রিয়াদের উদ্দেশ্যে যাওয়া প্রতিনিধি দলে রয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক কোম্পানির কয়েক ডজন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। এই সফরের মাধ্যমে নতুন নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরী হবে বলে আশা তাদের।
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সামীর সাত্তার। তিনি আরব নিউজকে বলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল সফরে যাচ্ছেন। প্রতিনিধি দলে বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় কোম্পানির ৫৩ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন।"
সামীর সাত্তার আরও বলেন, "আমরা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আমাদের ব্যবসার পরিসর আরও বাড়াতে চাই। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আমরা রপ্তানি বহুমুখীকরণের সুযোগকে বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করছি।"
বাংলাদেশী ব্যবসায়িক এই প্রতিনিধিদলের মধ্যে দেশের বহু বৃহৎ কোম্পানি। এরমধ্যে ইউনাইটেড গ্রুপ ও ইফাদ গ্রুপও রয়েছে৷ এরা অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, অটোমোবাইল এবং ভোগ্যপণ্যের ব্যবসার জন্য পরিচিত।
এ সম্পর্কে ইউনাইটেড গ্রুপের ডিরেক্টর মালিক তালহা ইসমাইল বারী আরব নিউজকে বলেন, "আমরা সৌদি আরবে ব্যবসার জন্য সম্ভাব্য অংশীদার এবং সঠিক কোম্পানিগুলোর সাথে দেখা করতে চাই। যাতে করে আমরা তাদের সাথে আমরা যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারি।"
ইসমাইল বারী আরও বলেন, "আমরা বহুমুখী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যদি তাদের আস্থা তৈরি করতে পারি, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক সৌদি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করবে।" এছাড়াও সৌদি আরবে কিছু বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে প্রযুক্তিগত আদান-প্রদানের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ইসমাইল বারী জানান, ইউনাইেড গ্রুপের নজর রয়েছে সৌদিতে ব্যবহৃত 'অত্যাধুনিক প্রযুক্তির' উপর। এছাড়াও বাংলাদেশ সৌদি আরবের স্মার্ট সিটি প্রযুক্তিও গ্রহণ করতে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে গার্মেন্টস, লজিস্টিকস এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা মক্কা, মদিনাসহ সৌদির বিভিন্ন শহরে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করবেন।
অন্যদিকে ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ জানান, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জ্বালানি খাতে আরও বেশি পরিমাণে সৌদি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাইছে।
তাসকিন আহমেদ বলেন, "সৌদি আরব একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ। তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হল এই বিনিয়োগগুলিকে লুফে নেওয়া।
তাসকিন আহমেদ আরও বলেন, "কীভাবে সৌদি বিনিয়োগগুলো আমরা আমাদের দেশে কাজে লাগাতে পারি? আমরা অটোমোবাইল ও বৈদ্যুতিক যানবাহন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাজ করার চেষ্টা করব।"
অন্যদিকে ঢাকাভিত্তিক জেনেক্স ইনফোসিস নামের একটি আইটি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আরব নিউজকে জানায়, কোম্পানিটি টেলিযোগাযোগে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্য রয়েছে।
এ বিষয়ে জেনেক্স ইনফোসিসের ডিরেক্টর এনায়েতুল ইসলাম বলেন, "আমরা সৌদি ব্যবসায়ীদের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে চাই। তাই বাংলাদেশে কিছু যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করব, বিশেষ করে টেলিকম অবকাঠামোতে।"
এনায়েতুল ইসলাম আরও বলেন, "সৌদি আরব আমাদের জন্য একটি নতুন বাজার হতে পারে। এখানে নতুন বাজার তৈরীর একটি বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।"
২০২১ সালে নভেম্বরে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে এলডিসিভুক্ত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটাবে। এতে করে এতদিন উন্নত দেশগুলোতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পেয়ে আসা অনেক সুযোগ বাংলাদেশ আর লাভ করবে না।
এ বিষয়ে সামির সাত্তার গত জুলাইয়ে বলেন, "আমাদের রপ্তানির বাজারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের শুধু একটি কিংবা দুটি অঞ্চলে মনোযোগ দিলেই চলবে না।"
অন্যদিকে সৌদির রাষ্ট্রদূত ঈশা আল-দুহাইলান তাদের প্রতিনিধিদল সফরের সময় বলেন, "আমি বাংলদেশের ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলোকে সৌদি আরব সফরে এসে ব্যবসার সুযোগ লুফে নেওয়ার কথা বলেছি। আমাদের ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি।"
সৌদি রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, "সৌদি আরবে ব্যবসার অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। এখেন যেকোনো ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের কথা শুধু ভাবুন, দেখবেন আপনি সেখানেই বিনিয়োগ করতে পারবেন।"