জুন প্রান্তিকে সবুজ ও টেকসই ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬,১৩২ কোটি টাকা
২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সবুজ ও টেকসই আর্থিক খাতে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ ৬,১৩২ কোটি টাকা তথা ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন মাসে এই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মোট ৪০,৪২৫ কোটি টাকা। গত বছর হয়েছিল ৩৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।
আর ২০২৩ এর মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে এই দুই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, এই বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যদিও ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীর হওয়ায় আগামী প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ কমে আসবে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প কারখানাগুলোর মেশিনারিজ আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ওই প্রান্তিকে। এখন দেশে নির্বাচনকালীন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকটে আমদানি ব্যাপক কমেছে। যা আগামী সময়ে এসব খাতের ঋণের প্রবাহ অনেক কমাবে।
তিনি আরও বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডারও প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যার ফলে নতুন করে শিল্প কারখানা ও ক্যাপিট্যাল মেশিনারিজ আমদানি অনেকটা কমে গেছে। সামনের এই খাতে বিনিয়োগ আরও কমবে।
টেকসই ফাইন্যান্স বলতে বোঝায় এমন এলাকা এবং এমন পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা যা বাহ্যিক কার্বন নিঃসরণ এবং অভ্যন্তরীণ কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে সাহায্য করে।
সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ ঘটা ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল ইত্যাদির মতো শিল্প প্রকল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ব্যাংকিং এবং এনবিএফআই।
বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সবুজ ও টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগ হয়।
বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগস্টে ৯.৭৫ এ নেমে এসেছে। যা ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।বেসরকারী খাতে ঋণ ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ৫ শতাংশ গ্রিন ফাইন্যান্স ও ২০২০ শতাংশ সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং করার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ৩,৯২৮ কোটি টাকা এবং সাসটেইনেবলে হয়েছে ৩৬, ৪৯৭ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার যথাক্রমে ৬.১৬ এবং ১৩.১৬ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশের অর্থনীতি টেকসই করতে সবুজ অর্থায়ন খাতে বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিনিয়োগ ঝুঁকি, সামাজিক ও কর্পোরেট গভর্নেন্স ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে এ খাতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যাংক নিয়ম মেনে এই খাতে অর্থায়ন করবে তারা ভবিষ্যতে ভালো করবে। এছাড়া এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করা হলে আরও অগ্রগতি আসবে।