সেপ্টেম্বরে টাকায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে ৭.৭৩%, ডলারে বেড়েছে ৪.৫২%
দেশে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় সেপ্টেম্বর মাসে টাকায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে ৭.৭৩ শতাংশ; অন্যদিকে ডলার সংকটের মধ্যেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলারের লেনদেন ৪.৫২ শতাংশ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডের খরচ গত আগস্টের ২,৪৩৭ কোটি টাকা থেকে সেপ্টেম্বরে ১৮৮ কোটি টাকা কমে ২,২৪৯ কোটি টাকা হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার প্রধানত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে হয়ে থাকে। সেপ্টেম্বরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে হয়েছে ৪৮.৫৪ শতাংশ; এরপরে খুচরা আউটলেট সার্ভিসগুলোতে হয়েছে ১২.৮৫ শতাংশ, ইউটিলিটি পরিশোধে ৯.২৩ শতাংশ এবং নগদ উত্তোলন হয়েছে ৮.৬৪ শতাংশ।
কিন্তু ডলারে ক্রেডিট কার্ডের খরচ বেড়েছে ৪ মিলিয়ন ডলার। বিদেশ ভ্রমণকারী বাংলাদেশিরা সেপ্টেম্বরে পণ্য ও সেবা খাতে খরচ করেছেন প্রায় ৪৩৬ কোটি টাকা, যা ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সমতুল্য; গেল আগস্টে এই খরচের পরিমাণ ছিল ৪১৭ কোটি টাকা বা ৪১ মিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ নভেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ২০.৭৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের একই সময়ে যা ছিল ৩৪.২৪ বিলিয়ন ডলার।
ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই লেনদেনের প্রায় ৭৭.৬৯ শতাংশ হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে, ১৪.৭৫ শতাংশ হয়েছে মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে এবং ৭.৫১ শতাংশ আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই সবচেয়ে বেশি কার্ড ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ডধারীরা। আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের প্রায় ১৬.৬৬ শতাংশ হয়েছে ভারতে। এরপরে যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে ১৫.৯০ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮.৯০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮.৫৬ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৭.৭০ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে হয়েছে ৭.৩৬ শতাংশ।
ব্যাংকারদের মতে, খোলা বাজার ও ব্যাংকিং সেক্টরের মধ্যে ডলার রেটের বিস্তর পার্থক্যের কারণে ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বেড়েছে। এর বিপরীতে, আসন্ন নির্বাচন থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের অভ্যন্তরে কমেছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার।
সিটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, খোলা বাজারের ডলারের দাম ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে প্রায় ৫/৭ টাকা বেশি। সেইসাথে, ডলার সংগ্রহ করতে নানান ধরনের হয়রানি হতে হয়। এছাড়া বাইরে ক্যাশ ডলারের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডে খরচ খুবই সহজ, তাই ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ ও লেনদেন বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, "ক্রেডিট কার্ডে যে পরিমাণ ফরেন কারেন্সি ব্যবহার হয় তা টাকায় হিসাব করা হয়। এখন ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ার কারণে ক্রেডিট কার্ডের ডলারের রেটও বাড়ছে।"
চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৭-১২৮ টাকায়। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের অনুকূলে ক্যাশ ডলার বিক্রি করছে ১১৫-১১৬ টাকা দরে।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার (১৩ নভেম্বর) খোলাবাজারে ডলার বিক্রেতা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোকে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় ডলার বিক্রি করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, ১১৫.৫০ টাকায় কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশ ভ্রমণের সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা কার্ড বা বহনকৃত ক্যাশ ডলারের মাধ্যমে বছরে ১২,০০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন। যদিও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে একজন ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ সীমা ৩০০ মার্কিন ডলার৷