দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রোববার বৈঠকে বসছেন চার মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা
কারসাজি রোধ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে রোববার (২১ জানুয়ারি) বৈঠকে বসছেন সরকারের চার মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সভায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতির সঙ্গে চাহিদা বিশ্লেষণ করে ঘাটতি চিহ্নিত করা এবং রমজানের আগে ঘাটতি মেটাতে পণ্য আমদানি সহজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। পাশাপাশি ঘোষিত মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় নির্ধারণ করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া চাল, আটা, তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ গরুর মাংস, ডিম ও পোল্ট্রি পণ্যের মূ্ল্য নিয়ন্ত্রণে কারসাজিকারীদের বিরেুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এক নম্বরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মন্ত্রিসভা বৈঠকে মজুতদার ও কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছেন।
'অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে একটি টিম হিসেবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কাজ আমরা শুরু করেছি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আটটি নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোজার আগে এসব নিত্যপণ্য আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করা হবে,' জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাজারে পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় একটি গোষ্ঠী চালের সরবরাহ প্রায় বন্ধ রেখেছিল। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতি বস্তা চাল ১০০-২০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। তার প্রভাব বাজারে পড়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সরকারের হাত অনেক লম্বা। মজুতদার ও কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনে তাদের আটকানো না গেলে দেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি, ব্যবসায়ীরা এই ঝূঁকি নেবেন না।'
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৪১ শতাংশ। ওই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৫৮ শতাংশ।
আগামী জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রোববারের বৈঠকে চাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ, লবণ, আটাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের প্রকৃত উৎপাদন ও চাহিদার যথাযথ পরিসংখ্যান নির্ধারণ করা হবে। প্রায়ই চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়া সত্বেও বাজারে পণ্য সংকট দেখা দেয়। তাই প্রকৃত উৎপাদন, আমদানি ও চাহিদার পরিসংখ্যান নির্ধারণের উপায় নির্ধারণ করা হবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোর পাশাপাশি কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোকেও সক্রিয় করার উপায় নির্ধারণ করা হবে। এসব সংস্থা নিয়মিত বাজারে মজুতদার ও কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
গত বছর ডিম, পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ইম্পোর্ট পারমিশন (আইপি) ইস্যু করতে মাসাধিককাল দেরি করা হয়। ফলে বাজারে ডিম ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। আগামীতে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ে ঘাটতির কারণে বাজারে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে।