‘সিটি ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টধারীরা লাইফটাইম ফ্রি মেইনটেনেন্স সুবিধা পাবেন’
ভ্রমণ শেষে অধিকাংশ মানুষই হাতে থাকা অতিরিক্ত ডলার বাসায় রেখে দেন। এবার মানুষের হাতে থাকা অলস ডলার ব্যাংকে ফেরাতে সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের দিচ্ছে 'লাইফটাইম অ্যাকাউন্ট মেইনটেনেন্স ফ্রি' সুবিধাসহ বিশেষ তিন ছাড়। গ্রাহকরা এখন সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট খুলে হাতে থাকা ডলার ব্যাংকে রেখে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ বার্ষিক সুদের সুবিধা পাবেন। এছাড়া ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২ হাজার ডলারের ব্যয়সীমার বাইরেও বিদেশে যেকোনো মুদ্রায় অবাধ খরচ করতে পারবেন। তবে সিটি ব্যাংকের বিশেষ তিন ছাড় পেতে হলে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সিটি ব্যাংকের রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের হেড অভ রিটেইল ব্যাংকিং অরূপ হায়দার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শাখাওয়াত প্রিন্স।
সিটি ব্যাংক আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের কেন বিশেষ ছাড় দিচ্ছে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরামর্শ হচ্ছে ব্যাংকের বাইরে, গ্রাহকের হাতে থাকা অলস ডলারগুলোকে ব্যাংকে ফেরানো। যার ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে নদগ ডলারের প্রবাহ বাড়বে। তখন গ্রাহকদের চাহিদানুযায়ী নগদ ডলার ব্যাংক থেকে পেতে সুবিধা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছে। আমাদের দেশের যেকোনো ব্যক্তি ফরেন কারেন্সিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি দেশের বাইরে ভ্রমণে গেলে নির্ধারিত পরিমাণ ডলার খরচ করতে পারেন। কিন্তু চিকিৎসার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আরও ডলারের প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে আরএফসিডি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই সীমার বাইরে খরচ করার সুযোগ রয়েছে।
এই অ্যাকাউন্ট থেকে সাধারণত সিটি ব্যাংকের আর্থিক লাভ কম। আমাদের সিটি ব্যাংকের নীতি হচ্ছে 'মেকিং সেন্স অভ মানি'। এর মাধ্যমে আমাদের মুনাফা কম হলেও আরও অধিক গ্রাহককে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
একজন গ্রাহক এই অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করলে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক সুদহার পাবেন। এর সুদহার হচ্ছে আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক সোফর রেট ৫.৩ শতাংশের সঙ্গে আরও ১.৫ শতাংশ যোগ হবে। যদিও এক বছর আগে মাত্র ১-২ শতাংশ সুদ দেওয়া হতো। তাই গ্রাহকদের এখন ঘরে ডলার রাখার সুযোগ কম। তাদের উচিত যেকোনো ব্যাংকে আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট খোলা।
একজন গ্রাহক কীভাবে আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট খুলবেন?
কোনো গ্রাহক সরাসরি আমাদের ব্যাংকে এসে অথবা '০৯৬১৭১১৬২৩৪'—এই নম্বরে কল করলেই সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য ও অ্যাকাউন্ট খুলতে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। সিটি ব্যাংকের সব অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখাতেই এই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।
অনেকে মনে করেন, দেশের ভেতরে ফরেন কারেন্সিতে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নেই। আসলে সবার জন্যই ফরেন কারেন্সিতে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ রয়েছে, আর সেটাই হচ্ছে আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট। আমাদের দেশের যেকোনো বাসিন্দা এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
সিটি ব্যাংকের বিশেষ ছাড়গুলো কী কী?
বর্তমানে আমাদের দেশের সব ব্যাংকের মাধ্যমেই আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ রয়েছে। তবে সিটি ব্যাংক ৩১ মার্চের মধ্যে এই অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বিশেষ তিনটি ছাড় দিচ্ছে।
একজন গ্রাহক যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলেন, তাহলে লাইফটাইমের জন্য 'অ্যাকাউন্ট মেইনটেনেন্স কস্ট' সম্পূর্ণ ফ্রি।
এছাড়া অ্যাকাউন্টের বিপরীতে গ্রাহককে একটা ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে। বিশেষ সুবিধার বাইরে একজন এই কার্ড তুলতে ১২ ডলার ফি প্রয়োজন হয়। তবে ৩১ মার্চের আগে অ্যাকাউন্ট খোলা গ্রাহকদের আমরা সবসময়ের জন্য ফ্রি দেব।
এছাড়া গ্রাহক এই কার্ডের মাধ্যমে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস (এমেক্স) লাউঞ্জের সুবিধা পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে তার অ্যকাউন্টে ন্যূনতম ২ হাজার ডলারের ব্যালেন্স থাকতে হবে।
গ্রাহকরা এই অ্যাকাউন্টে ডলার রাখবেন কীভাবে?
গ্রাহক যখন বিদেশ থেকে ফিরবেন, তখন আরএফসিডি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলারগুলো এই অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট হিসেবে রাখতে পারবেন। একবার গেলে তার বিপরীতে অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার ডলার রাখতে পারবেন।
যদিও কোনো ব্যক্তি এর চেয়েও বেশি ডলার রাখতে চান, তাহলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের করা ফরেন মানি অ্যান্ড জুয়েলারি (এফএমজে) ফরমের মাধ্যমে সত্যায়িত করে অতিরিক্ত ডলার রাখতে পারবেন। তবে তা ভ্রমণ শেষে ৩০ দিনের মধ্যেই দিতে হবে।
এছাড়া গ্রাহক তাদের অতীত ভ্রমণের বিপরীতেও টাকা ডিপোজিট রাখতে পারবেন। ধরুন, আপনি ২০১৮ সালে একবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, যদিও তার বিপরীতে আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে ডলার জমা করেননি। এখন সেই ভ্রমণের বিপরীতেও ডলার জমা রাখতে পারবেন।
গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্টে থাকা ডলার কীভাবে খরচ করবেন?
সাধারণত একজন গ্রাহক ব্যাংক সীমানুযায়ী বছরে ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারেন। তবে গ্রাহকের যদি আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে বিদেশ ভ্রমণের সময় এ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৫ হাজার ডলার ক্যাশ নিতে পারবেন।
এছাড়া আরএফসিডি অ্যাকাউন্টের বিপরীতের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে দেশের বাইরে গিয়ে ওই দেশের মুদ্রা এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন অথবা কোনো পেমেন্টও করতে পারবেন গ্রাহক।
বর্তমানে এ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডলার, ইউরো, পাউন্ড খরচ করা যায়। যদিও ক্রমান্বয়ে অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান ও সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার নিয়েও কাজ করব।
যারা বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাদের জন্যেই খুবই উপযোগী এই অ্যাকাউন্ট, বিশেষ করে যাদের সন্তানেরা পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকে কিংবা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান।
সাধারণত বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেউ ই-কমার্সে ৩০০ ডলারের বেশি খরচ করতে পারেন না। তবে এই অ্যাকাউন্টের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে ২-৩ হাজার ডলারেরও পেমেন্ট করতে পারবেন। অর্থাৎ এই ব্যালেন্স পুরোটা আপনার। তাই কীভাবে এটা খরচ করবেন, সে ব্যাপারে আপনার সব ধরনের স্বাধীনতা রয়েছে।
এই কার্ডে আর কী সুবিধা আছে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি আরএফসিডি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটি ডেবিট কার্ড পাবেন। তবে এই কার্ডের দুটো সাবসিডিয়ারি কার্ড ইস্যু করতে পারবেন। ধরুন, আপনার সন্তান বাইরের দেশে পড়ছে, তাকে একটা কার্ড দিলেন।
আবার ধরুন, বাবা-মা জানতে চাচ্ছেন সন্তানরা কোথায় কোথায় টাকাটা খরচ করছে। এই কার্ডের মাধ্যমে যেখানেই খরচ করুক, তার একটা মেসেজ চলে আসবে গ্রাহকের ফোনে।
এছাড়া চিকিৎসার জন্য হঠাৎ করেই টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয়ে যায়; সেক্ষেত্রে গ্রাহক তাৎক্ষণিক তার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশে অপর অ্যাকাউন্টে ডলার পাঠাতে পারবেন।