বিদেশে জমি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের তদন্ত করছে দুদক: বিএফআইইউ প্রধান
দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেছেন, বিদেশে যারা জমি-ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাদের বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে মাসুদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে ২৬০টি বাড়ির মালিকানার অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, 'এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এ নিয়ে আদালত থেকে যে নির্দেশনা এসেছে, সেভাবে আমাদের কাজ চলছে।'
বিএফআইইউ প্রধান বলেন, 'বিদেশে অর্থ পাচারের ৮০ শতাংশ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর এটি হচ্ছে ব্যাংকারদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের অভাবে।'
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানিতে যদি ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডারইনভয়েসিং করে অর্থ পাচার হয় এটা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেরই দেখা উচিত।'
তিনি আরও বলেন, 'একবার অর্থ পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা কঠিন। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। চুক্তিটা হলে ইউরোপ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পাচারের তথ্য পাওয়া সহজ হবে। এর জন্য স্ট্রং পলিটিক্যাল কমিটমেন্টের প্রয়োজন।'
দেশ থেকে আর কারা অর্থ পাচার করেছেন ও পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনতে কী করা হচ্ছে, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বিদেশের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে সব সময় তথ্য পাওয়া যায় না।
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা চালানো প্রতিষ্ঠান এমটিএফইর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, 'জড়িতদের ধরতে আমরা দুবাইয়ের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে অনুরোধ করেছিলাম। জড়িতরা দুবাই থেকে পালিয়ে গেছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। ডিজিটাল প্রতারণা ধরতে আমাদের তেমন সক্ষমতা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা চলছে।'
অর্থ পাচার রোধে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, 'কেউ অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা জানতেও পারি না। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছি। আদালত থেকে যেসব নির্দেশনা আসে, তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নিই।'
এখন পর্যন্ত বিদেশে পাচার হওয়া কি পরিমাণ অর্থ ফেরত আনা গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, 'সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়া ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার আমরা ফেরত এনেছি।'
তিনি জোর দেন, অর্থ পাচার একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। এখানে বহু পক্ষ জড়িত থাকে, বহু দেশ জড়িত থাকে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, 'বিএফআইইউর তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ পাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি ১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।'
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, 'দিন দিন ব্যাংকিং সেবাতে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে নগদ লেনদেন। এখন ভয় কাটিয়ে ব্যাংকাররা আগের চেয়ে অনেক বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাঠাচ্ছেন। তাই ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ৪ গুণ বেড়েছে।'