নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ সত্ত্বেও রমজানের আগেই বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম
রমজান শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় বাকি থাকলেও রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগি, চিনি, পেঁয়াজ খেজুর ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়ছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১২ মার্চ শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এর আগেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে বাজারে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও কল্যাণপুর বাজারসহ চারটি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে ছোলার দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে থেকে ১০০-১০৫ টাকায় উঠেছে।
কল্যাণপুরের মুদি দোকানের বিক্রেতা মোহাম্মদ কামাল হোসেন রিয়াজ বলেন, রমজানের আগেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 'প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৫ দিন আগেরও পাইকারি কিনতাম ১৩২ টাকা। সেটা এখন কিনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।'
তিনি বলেন, 'আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। তাই আমরা সেই দাম থেকে কিছুটা লাভ করে বিক্রি করি।' পাঁচ লিটার বোতজাত সয়াবিন তেল ৭৮০-৮২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কামাল।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লাল চিনির দাম কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে দাম ১৬০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে ওইদিনই সন্ধ্যায় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসের তুলনায় প্রায় ২০ ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গত মাসে এই সময়ে বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৯৫ থেকে ১১০ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
চিনির দাম ১৪০-১৪৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ২৫০-৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ২৫০ থেকে ৮৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০-৯০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১১৫-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খোলা সাদা আটা ৪৫-৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এখন সরু চাল ৬৫-৭৮ টাকা, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স আল আমিন ট্রেডার্সের বিক্রেতা মোহম্মদ ইমন জানান, চিনি ১৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন তারা। 'গত বছর ছোলা বিক্রি করেছিলাম ৮০ টাকা কেজি, এখন ১০৫ টাকা বিক্রি করছি।'
এদিকে পবিত্র রমজানের আগে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
টিসিবির তথ্য বলছে, এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৯০-২০০ টাকা। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি করতে দেখা যায় ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। মগবজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজিতে।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন অনেক সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাই ব্রয়লারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও কিছুটা বাড়তি।
কয়েক দফায় মূল্যবৃদ্ধির পরও এখনো বেড়েই চলছে পেঁয়াজের ঝাঁঝ। কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহম্মদ আলতাফ হোসেন বলেন, পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১২ টাকায়।
তবে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন সেই পেয়াঁজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বজারে বাজার করতে আসা সাহে আলম বলেন, 'সব জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে আমাদের আয় আর সেইভাবে বাড়ছে না। এখন গত বছর এই সময় পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৩৫-৪০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ এখন ১২৫ টাকা। এখনই এত দাম, রমজান শুরু হলে কী হবে সেই চিন্তা করছি।'
রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসব পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দিলেও এখনও বাজারে কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ দেখা যায়নি।