প্রথমবারের মতো দেশে তৈরি ফাইবারগ্লাস মসকিউটো নেট বাজারে আনছে পিএইচপি
চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলি আগামী ১৫ মে প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা মশকরোধী জাল (মসকিউটো নেট) বাজারে আনবে।
পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন সৈয়দ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত ২৯ এপ্রিল এই পণ্যের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। আর ১৫ মে থেকে সারাদেশে পিএইচপি পণ্যের ডিলার ও পরিবেশকদের আউটলেটগুলোয় এটি পাওয়া যাবে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এটি উৎপাদনে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও পরিবেশন প্রক্রিয়ায় ৫ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
বাসাবাড়ি বা অফিসে মশার প্রবেশ ঠেকাতে এই জাল জানালার কাঁচ ও অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের মাঝামাঝি লাগানো হয়। পিএইচপি ফ্যামিলির উৎপাদন শুরুর আগে এ পণ্যের জন্য পুরোপুরি চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করতো বাংলাদেশ।
পিএইচপির কারখানায় বর্তমানে প্রতি মাসে ১ কোটি বর্গফুট ফাইবার গ্লাস মসকিউটো নেট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। তবে বাজার চাহিদার ভিত্তিতে দরকার হলে প্রতি মাসে ৩ কোটি বর্গফুট উৎপাদনের ব্যবস্থা রেখেছে।
বর্তমানে ফাইবার গ্লাসের তৈরি আমদানি করা মশকরোধী জালের দাম প্রতি বর্গফুটে ৮ থেকে ১০ টাকা। দেশের বাজারে পণ্যটি আরো কম দামে ৬ থেকে ৭ টাকা বর্গফুট হিসেবে বিক্রির পরিকল্পনা করছে পিএইচপি।
আমির হোসেন বলেন, দেশে এখন মশার যে উপদ্রুপ এই নেট ব্যবহার করে তা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব। "তবে আমদানি করতে হওয়ায় স্থানীয় বাজারে পণ্যটি যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় না। তাছাড়া, দামও বেশি হওয়ায় মানুষজন নেট লাগাতে চায় না।"
বাংলাদেশে এটি উৎপাদনের কোনো কারখানা ছিল না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, "আমরা লক্ষ করলাম, আমাদের গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের ডিলাররা আমদানিকারকদের থেকে ফাইবার গ্লাস নেটও কিনছেন। এই চাহিদা বুঝতে পেরেই কোনোপ্রকার বাজার জরিপ না করেই উদ্যোগটি নিয়েছে পিএইচপি।
"লাভ-লোকসান নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। আমাদের লক্ষ্য স্থানীয় বাজারে তুলনামুলক কম দামে এই পণ্যের জোগান বাড়ানো, যাতে মানুষ মশা ঠেকাতে নেট ব্যবহার উৎসাহী হয়। আমরা গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়াম প্রোফাইল (ফ্রেম) বিক্রি করি, তাই ডিলারদের মাধ্যমে এটি বাজারজাত করাও আমাদের জন্য সহজ হবে" – তিনি যোগ করেন।
স্থানীয় কোম্পানিগুলোর নতুন পণ্য বাজারে আনার ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মসকিউটো নেট প্ল্যান্টে বিনিয়োগের বিষয়ে আমির হোসেন বলেন, "অ্যালুমিনিয়াম ফার্নেস, গ্লাস বেন্ডিং টেবিল, গ্লাস বড়, অ্যালুমিনিয়ামের মই এবং মসকিউটো নেট – আমরা একসাথে পাঁচটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি । সব মিলিয়ে এই পাঁচ প্রকল্পে বিনিয়োগ ৫০০ কোটি টাকা। এরমধ্যেই আমরা তিনটি কারখানা চালু করেছি, বাকি দুটি খুব শিগগিরই চালু হবে।"
পিএইচপি যাত্রা শুরু করে ১৯৯৯ সালে। এই শিল্পগোষ্ঠীর অধীনে আছে ৩০টির বেশি কোম্পানি, যেগুলো ইস্পাত, ফ্লোট গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, টেক্সটাইল, পেট্রো রিফাইনারি, আর্থিক সেবা, কৃষি, অটোমোবাইল, জাহাজ রিসাইক্লিংসহ বিবিধ খাতে ব্যবসায় জড়িত।
শিল্পগোষ্ঠীটির ১০ হাজারের বেশি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, তাঁদের বার্ষিক বিক্রি বা টার্নওভার হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা।