সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস উৎপাদনে যাচ্ছে পিএইচপি
বিমানবন্দর এলাকা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতিতে শব্দ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস। কাচ শিল্পের এই আধুনিক পণ্যটি দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে যাচ্ছে পিএইচপি ফ্যামিলি। শিল্প গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ আমদানি নির্ভর এই কাচ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছরের শুরুতে দেশে তৈরি শব্দ প্রতিরোধক গ্লাস গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে চায় পিএইচপি।
পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সুলতান মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সীতাকুণ্ডের বারবকুণ্ডে অবস্থিত আমাদের কারখানায় একটি আলাদা শেড স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়েছে। নতুন প্ল্যান্টের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। চীনে যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ চলছে। চীনা প্রযুক্তির সঙ্গে ইউরোপীয় প্রযুক্তির সংযুক্তি রয়েছে। চীনা প্রযুক্তি ভার্টিক্যাল অটোমেটিক ইনসুলেশন গ্লাস টেকনোলজিতে সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস উৎপাদন করা হবে।"
মূলত শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল, বিলাসবহুল বসতি, রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল, রেলওয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিমানবন্দর ছাড়াও শব্দ প্রতিরোধক গ্লাসের বহুমাত্রিক ব্যবহার রয়েছে। অন্যান্য গ্লাসের তুলনায় অনেক মজবুত ও টেকসই এটি। কাচের একাধিক লেয়ার দিয়ে তৈরি করা হয়। বছরে প্রায় ২ হাজার ৪০০ টন সাউন্ডপ্রুফ গ্লাসের চাহিদা রয়েছে দেশে। ছোট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন করছে। তবে চাহিদার ৯০ শতাংশের জন্য নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। বর্তমানে প্রতি বর্গফুট সাউন্ডপ্রুফ গ্লাসের বাজারমূল্য ৯০০-১০০০ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে ৫০০-৬০০ টাকায় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছে পিএইচপি।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ৯০-৯৫ শতাংশ শব্দ প্রতিরোধ করে আধুনিক প্রযুক্তির গ্লাসটি। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আটকায়। গ্লাসের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে অনেক জিনিসপত্র ফেটে যায়। তা থেকেও সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস রক্ষা করে। এছাড়া গ্লাসটি তুলনামূলক টেকসই ও মজবুত। তাই দিনদিন এই গ্লাসের ব্যবহার বাড়ছে।
পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ছে। তাই মানুষ আধুনিক গ্লাস ব্যবহার করছেন। আমাদের টার্গেট দেশে শব্দ প্রতিরোধক এই আধুনিক গ্লাস উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যয় কমানো আর গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ঢাকার অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারা বিমানবন্দরের কাছে। বিমানের শব্দের কারণে সেখানে শব্দ প্রতিরোধক গ্লাস প্রয়োজন। ওখানকার কমিউনিটিও আগ্রহী। ইতোমধ্যে কিছু কমিউনিটির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "দৈনিক ৫০০ টন গ্লাস উৎপাদনের সক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট করছি। চাহিদা অনুসারে গ্লাস উৎপাদন করা হবে। সাধারণত দুই লেয়ারের সাউন্ডপ্রুফ গ্লাসের চাহিদা থাকে। প্রয়োজন অনুসারে চার লেয়ারসম্পন্ন গ্লাস উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকবে নতুন প্ল্যান্টে।"
বর্তমানে দেশে বার্ষিক কাচের চাহিদা প্রায় ২৫ মিলিয়ন বর্গফুট। দেশের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত কাচের পরিমাণ ৩২ মিলিয়ন বর্গফুট। দেশে দুই হাজার কোটি টাকার কাচের বাজার রয়েছে। দেশীয় বাজারের ৪০ শতাংশ পূরণ করছে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ড্রাস্টিজ। পিএইচপি বর্তমানে ক্লিয়ার ফ্লোট গ্লাস, বেভেল গ্লাস, এ'জ গ্লাস, মৌল্ডজ গ্লাস, টেম্পার্টড গ্লাস, রিফ্লেক্টিভ গ্লাসসহ সাত ধরণের গ্লাস উৎপাদন করছে। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভারত, ভূটান ও নেপালে ক্লিয়ার ফ্লোট গ্লাস রপ্তানি করছে; মোট উৎপাদনের ৮-১০ শতাংশ রপ্তানি হচ্ছে।
দেশে কাচশিল্পের ভিত গড়ে উঠেছিল প্রায় ৬০ বছর আগের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরির মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির হাত ধরে বাংলাদেশে প্রথম কাচ উৎপাদন শুরু হয়। তখন বাংলাদেশে শুধু সাদাকালো গ্লাস উৎপাদন হতো। ২০০৫ সালে কাচ উৎপাদনে বিনিয়োগ করে ইস্পাত শিল্পের প্রতিষ্ঠান পিএইচপি। বর্তমানে বছরে প্রায় ৯১ হাজার টন কাচ উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালে পিএইচপি রিফ্লেক্টিভ কাচ উৎপাদনে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে আরো ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে চীনা ও ইউরোপিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বর্তমানে দেড় হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছেন।
কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে এই খাতে বিনিয়োগও বাড়ছে। কাচের কাঁচামালের মধ্যে অন্যতম হলো সিলিকা বালি। কাঁচামালের ৬০ শতাংশ উপাদানই আসে দেশীয় এই সিলিকা বালি থেকে। অন্যান্য কাঁচামাল হচ্ছে সোডা অ্যাশ, ডলোমাইট, লাইমস্টোন, সল্ট কেক এবং কোল পাউডার। এসব কাঁচামাল ইউরোপ, চীন, মিশর, ভুটান, পাকিস্তান, তুর্কি, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়।