দেশে রঙিন কাচের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে এসেছে পিএইচপি
গত বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসা-গোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলি রঙিন ও বিলাসবহুল রিফ্লেক্টিভ কাচ উৎপাদনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দেশে এই কাচের চাহিদা মেটানো হতো আমদানির মাধ্যমে।
দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রথমবারের মতো রঙিন গ্লাসের উৎপাদনে যায় দেশে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি পিএইচপি। কোম্পানিটি প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই খাতে।
এরপর অল্প সময়েই রিফ্লেক্টিভ গ্লাসের দেশীয় বাজারের মোট ৩০ শতাংশের দখল নিয়ে নেয় পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানটি এখন ১০ রকমের রঙিন রিফ্লেক্টিভ কাচ উৎপাদন করছে। বর্তমানে পিএইচপির মাসিক উৎপাদন ১ হাজার টন।
পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে এবং পিএইচপি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমির হোসেন সোহেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রিফ্লেক্টিভ গ্লাসের কাঁচামাল মূলত আমাদের নিজস্ব তৈরিকৃত ফ্লোট গ্লাস।
'এর পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ প্রযুক্তির সমন্বয়ে ১০ রঙের রিফ্লেক্টিভ গ্লাস তৈরি করা হচ্ছে আমাদের কারখানায়। যেমন বেগুনি, ভায়োলেট, গোলাপি, কমলা, সোনালি রঙের গ্লাস উৎপাদন ও সফলভাবে বাজারজাত করছি।'
২০০৫ সাল থেকে কাচ উৎপাদনে বিনিয়োগের পরও পিএইচপি বাজার প্রতিযোগিতার কারণে রিফ্লেক্টিভ কাচ আমদানির সাথে যুক্ত ছিল। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ১০ কোটি টাকারও বেশি বিশেষ ধরনের কাচ আমদানি করে গ্রাহকের চাহিদা মেটাত।
পিএইচপি একা নয়, বস্তুত পুরো শিল্পই দেশে বছরে প্রায় ৩ হাজার টনের মতো রিফ্লেক্টিভ কাচ আমদানি করত। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকারও বেশি।
২০২১ সালে পিএইচপি রিফ্লেক্টিভ কাচ উৎপাদনে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। এছাড়া সম্প্রতি নতুন করে আরও ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। বর্তমানে চীনা ও ইউরোপিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিএইচপি প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টন কাচ উৎপাদন করে। উৎপাদিত কাচের তালিকায় মিরর গ্লাস ও টেম্পারড গ্লাসও রয়েছে।
প্রায় ৬০ বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরীর হাত ধরে বাংলাদেশে প্রথম কাচ উৎপাদন শুরু হয়। তখন বাংলাদেশে শুধু সাদাকালো গ্লাস উৎপাদন হতো। আর রঙিন গ্লাসের চাহিদা মেটানো হতো আমদানির মাধ্যমে।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে রঙিন কাচের চাহিদাও। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাচ উৎপাদনে বৈচিত্র্য না থাকায় এগিয়ে আসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
২০২১ সালের শুরুতে চট্টগ্রামের পিএইচপি ফ্যামিলি ১০ রকমের রঙিন রিফ্লেক্টিভ কাচ উৎপাদন শুরু করে। এতে দেশে কাচ আমদানির নির্ভরতা কমেছে। বর্তমানে পিএইচপি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার কাচ বিক্রি করে।
দেশের পিএইচপিই প্রথম ফ্লোট গ্লাস তৈরির প্রযুক্তি আনে। এরপর তাদের দেখানো পথে আরও কিছু কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করে।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে পিএইচপি এখন ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাচ রপ্তানির কথা ভাবছে।
সম্প্রতি সরকার কাচ খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আমির হোসেন সোহেল বলেন, 'আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ভারত, নেপালসহ আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে রিফ্লেক্টিভ গ্লাসের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
'স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বাংলাদেশে উৎপাদিত রিফ্লেক্টিভ কাচ বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে ভূমিকা রাখতে পারব বলে আশা করছি।'
বর্তমানে দেশে বার্ষিক কাচের চাহিদা প্রায় ২৫ মিলিয়ন বর্গফুট। দেশের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত কাচের পরিমাণ ৩২ মিলিয়ন বর্গফুট। দেশে দুই হাজার কোটি টাকার কাচের বাজার রয়েছে।
কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে এই খাতে বিনিয়োগও বাড়ছে। কাচের কাঁচামালের মধ্যে অন্যতম হলো সিলিকা বালি। কাঁচামালের ৬০ শতাংশ উপাদানই আসে দেশীয় এই সিলিকা বালি থেকে। অন্যান্য কাঁচামাল হচ্ছে সোডা অ্যাশ, ডোলোমাইট, লাইমস্টোন, সল্ট কেক এবং কোল পাউডার। এসব কাঁচামাল ইউরোপ, চীন, মিশর, ভুটান, পাকিস্তান, তুর্কি, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়।