বীমা পলিসি হোল্ডারদের সুরক্ষার জন্য সলভেন্সি মার্জিন আইন বাস্তবায়নে জোর
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেছেন, বীমা খাতে গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্য সলভেন্সি মার্জিন আইন কার্যকর করা অপরিহার্য।
গতকাল (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি) আয়োজিত "বীমা ব্যবসায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উপায়" শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার সময় জয়নুল বারী বলেন, গ্রাহকদের সুরক্ষায় বীমা কোম্পানিগুলোর সলভেন্সি (সচ্ছলতা) নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, "অনেকেই মনে করেন, সলভেন্সি মার্জিন কার্যকর করলে কিছু কোম্পানি ব্যবসা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হতে পারে বা টিকতে পারবে না। কিন্তু আমার মতে, যদি কোনো বীমা কোম্পানি নিজেই সলভেন্ট না থাকে, তাহলে কীভাবে তারা গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে?"
তিনি আরও বলেন, বীমা খাত সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা দূর করতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন– বিআইপিডি'র অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মুস্তফা কামাল মুজেরি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন-এর (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদসহ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বারী বলেন, আর্থিক স্বচ্ছতা ছাড়া বীমা খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আর্থিকভাবে অস্থিতিশীল কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে সমস্যার মুখোমুখি হবে এবং দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বারী আরও জানান, অনেক কোম্পানি আইনগতভাবে নির্ধারিত বিনিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অবস্থার অবনতি হয়েছে।
সলভেন্সি মার্জিন বলতে অতিরিক্ত সম্পদকে বোঝায়, যেটি বীমা কোম্পানিকে তার ঋণের তুলনায় বেশি রাখতে হয়। এটি নিশ্চিত করে, কোম্পানি তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম এবং সময়মতো দাবি পরিশোধ করতে পারবে। মূলত, সলভেন্সি মার্জিন একটি আর্থিক সুরক্ষাবলয় হিসেবে কাজ করে। এটি নিশ্চিত করে, গ্রাহকদের সুরক্ষা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কোম্পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে অতিরিক্ত সম্পদ ধরে রেখেছে।
গত বছরের এপ্রিলে, তৎকালীন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জয়লুন বারী টিবিএস-কে জানিয়েছিলেন, বীমা খাতের স্থায়িত্ব বাড়াতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, "এই আইন সলভেন্সি শক্তিশালী করে দাবি পরিশোধে কোম্পানিগুলোকে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে সহায়তা করবে।"
তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য সলভেন্সি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
সেমিনারে বারী উল্লেখ করেন, বীমা খাতে প্রথম বছরের প্রিমিয়াম আয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা রয়েছে। সেখানে কর্মীদের প্রথম বছরের ব্যবসার পরিমাণ অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়। তবে এই প্রবণতা শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বাধা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বীমা গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা থাকে। তাই তাদেরকে বীমার সুবিধা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয়া প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেন, উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বীমা খাত জিডিপিতে খুব সামান্য অবদান রাখে, যেটি অর্থনীতিতে আর্থিক নিরাপত্তার অভাব থাকার ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন,"যথেষ্ট নিয়ম থাকা সত্ত্বেও, সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করাও জরুরি।"
জাতীয় স্বার্থে বীমা শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ করে মুস্তফা কামাল মুজেরি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করত না পারলে বীমা খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আস্থা সৃষ্টি করতে না পারলে বীমা সেবা কাজে লাগানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাজের মাধ্যমে এই স্বচ্ছতা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রোডাক্ট প্রাইসিং অনুসারে খরচ করতে হবে। তিনি বলেন, "কিন্তু কোম্পানিগুলো তা মানে না। এ কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি।"
তিনি আরও বলেন, জীবন বীমা কোম্পানিগুলো একই নিয়ন্ত্রক ও নিয়ম-কানুনের অধীনে পরিচালিত হলেও কিছু কোম্পানি এই নিয়মগুলো মেনে চলে, আবার কিছু কোম্পানি তা অনুসরণ করে না। তিনি মন্তব্য করেন, "এই অসংগতি কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা নষ্ট হচ্ছে"
বিআইএ'র প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহক ও বীমা কোম্পানির মধ্যে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেলে এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। এতে বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ফার্মের প্রতিনিধিরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দিনব্যাপী এই পেশাগত সেমিনারে অংশ নেন।