রানারের সঙ্গে যৌথভাবে হেলমেট উৎপাদন করবে অ্যাটলাস বাংলাদেশ
রানার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রানার ট্রেড পার্কের সঙ্গে যৌথভাবে মোটরসাইকেল হেলমেট উৎপাদন করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান অ্যাটলাস বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে এ উদ্যোগে ১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
অ্যাটলাস বাংলাদেশের কারখানা প্রাঙ্গণে একটি হেলমেট উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। অ্যাটলাস-রানার হেলমেট প্ল্যান্ট নামক এই ইউনিট উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পৃথক বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হবে।
গতকাল (২৫ নভেম্বর) অ্যাটলাস বাংলাদেশ এই নতুন উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯.৯৪ শতাংশ বেড়ে ৫৬.৪০ টাকায় পৌঁছায়—যা একদিনে শেয়ারবাজারে অনুমোদিত সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।
অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড টু-হুইলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রানার ট্রেড পার্ক বাজাজের আসল যন্ত্রাংশ ও লুব্রিকেন্টের অনুমোদিত পরিবেশক। রানার ট্রেড পার্কের ব্যবসা মূলত টু-হুইলার ও থ্রি-হুইলার খাতে।
অ্যাটলাস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'হেলমেটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাজারটি বর্তমানে ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর।'
দেশের হেলমেটের বাজারের আকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্যই হেলমেট উৎপাদনের যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
এটি দেশে মোটরসাইকেল হেলমেট উৎপাদনের দ্বিতীয় স্থানীয় উদ্যোগ বলে জানিয়েছে সূত্র।
এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে আরএফএল গ্রুপ দেশে প্রথমবারের মতো হেলমেট উৎপাদন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি সেইফমেট ব্র্যান্ডের অধীনে প্রথমে দুই ধরনের হেলমেট বাজারে আনে—হাফ-ফেস ও ফুল-ফেস। এ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।
এই হেলমেটগুলো উৎপাদিত হয় আরএফএল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেডের নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত কারখানায়। কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার ইউনিটের বেশি।
অ্যাটলাস-রানার হেলমেট প্ল্যান্ট আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদে তাদের পণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে।
মো. আজিবর রহমান জানান, দেশে হেলমেটের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ। প্রাথমিকভাবে তাদের লক্ষ্য বছরে ৬ লাখ ইউনিট হেলমেট উৎপাদন করা। বাজারে চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
অ্যাটলাস বাংলাদেশের উত্থান-পতনের ইতিহাস
ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ১৯৬৬ সালে হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে অ্যাটলাস বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে নিয়ে আসা হয়।
১৯৮৮ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালে হিরো হোন্ডার সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করে অ্যাটলাস।
তবে ২০১১ সালে জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডা ও ভারতীয় ব্র্যান্ড হিরো হোন্ডা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই অ্যাটলাসের ব্যবসা খারাপ হতে শুরু করে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি টিভিএস অটো বাংলাদেশের সঙ্গে কর্পোরেট অংশীদারত্বে যায়। এর দুবছর পর, ২০২০ সালে টিভিএস টিভিএস মোটরসাইকেল সংযোজনের জন্য অ্যাটলাস একটি নতুন সংযোজন লাইন চালু করে।
তবে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে না পারায় অ্যাতলাস দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অ্যাটলাস ৬.৬৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে, শেয়ারহোল্ডারদেরও কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।