খেলাপি হওয়ার পরও বেক্সিমকো কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ পেল: হাইকোর্ট
খেলাপি হওয়ার পরও বেক্সিমকো গ্রুপ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কেন নিশ্চুপ ছিল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ– বিএফআইইউ এর তখনকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিটকারী আইনজীবীকে আবেদন করতে বলেছেন আদালত।
বেক্সিমকো গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ আদায় করতে এবং বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া সংক্রান্ত রিটের ওপর ফলো-আপ শুনানিতে এই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী ব্যারিস্টার মাসুদ আর সোবহান।
শুনানি শেষে মাসুদ আর সোবহান টিবিএসকে বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি এফিডেভিড আদালতে দাখিল করা হয়। ওখানে দেখা গেল, বেক্সিমকো কোনো ব্যাংককে কোনো রকম টাকা পরিশোধ করেনি, ওরা খেলাপি ছিল। বেক্সিমকো যেসব ঋণ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছে সেগুলো সীমা অতিক্রম করেছে। (ঋণ প্রদানের জন্য) জনতা ও সোনালী ব্যাংক মূলত দায়ী ছিল।
তিনি বলেন, "এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়েছে, ওরা (বেক্সিমকো) খেলাপি ছিল, তখন আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করলেন….এত হাজার কোটি টাকা (প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা) আইন লংঘন করে যে ঋণগুলো দেয়া হলো – বাংলাদেশ ব্যাংক কি এর জন্য রিসপনসিবল ছিল না? আদালত বলেছেন তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) ফেইলড টু ইনভেস্টিগেট, আপনাদের নলেজে ছিল না, এটা হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কেন রিটকারী আইনজীবীকে বেক্সিমকোর ঋণ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে না, এর আগে হাইকোর্টের আদেশ ছিল ঋণ সংক্রান্ত সকল তথ্য দেয়া।"
মাসুদ আর সোবহান বলেন, "এতো ব্যত্যয় হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক কেন কোনো অ্যাকশন নেয় নাই, আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ) আছে, তারা কি করেছে, তাদের তো সব কিছু জানার কথা। তখন আদালত আমাকে বললেন আপনি (রিটকারী আইনজীবী) একটি অ্যাপ্লিকেশন (আর্জি) নিয়ে আসেন ওদেরকে (বিএফআইউ) মামলায় পার্টি (বিবাদী) করার জন্য। আমি আদালতকে বলেছি, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইউ এর কি প্রতিকার নেয়ার কথা ছিল, সেটাতো আইনেই বলে দেয়া আছে। এরপর তারা কেনো চুপ ছিল।"
এই আইনজীবী বলেন, "এই অপরাধগুলো যে দেশকে কোন স্কেলে শেষ করেছে….এতো কিছু হওয়ার পরও বেক্সিমকোর কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ পরিশোধ করতো না… এরপরেও হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ৮০ হা্জার কোটি টাকা তারা ঋণ নিয়ে গেছে। এর মধ্যে জনতা ও সোনালী ব্যাংক থেকে বেশি নিয়েছে, এছাড়াও ঋণ সীমা ও আইন লংঘন করে অন্যান্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছে।"
তিনি বলেন, "কোর্ট আমাকে যে আবেদন দিতে বলেছে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইউকে পার্টি করার কথা বলেছেন, কোর্ট তাদের কাছে জানতে চাইবে, তারা কেন বেক্সিমকোর এতো বড় কেলেঙ্কারির পরও চুপচাপ বসে ছিল।"
"আমি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি…. ব্যাংকিং আইন এক জিনিস, আর এখানে যেটি হয়েছে সেটি হলো ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম (আর্থিক অপরাধ) ….মানি লন্ডারিং, আরেক ধরনের অপরাধ, এগুলোর জন্য ক্রিমিনাল কেইস (ফৌজদারী মামলা) করতে হবে। কারণ, তারা (তখনকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইউ সংশ্লিষ্টরা) বেক্সিমকোর ক্রাইম পার্টনার (অপরাধের দোসর)। আগে যারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইউ এর কর্মকর্তা ছিল তাদের সবার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল প্রসেডিংস শুরু করার জন্য আবেদন করব" - তিনি যোগ করেন।