বাংলাদেশ ছাড়ছে সর্বশেষ বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস
পশ্চিমা বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, নুভিস্তা ও সানোফির পর এবার বাংলাদেশ ছাড়ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নোভার্টিস এজি। প্রতিষ্ঠানটি তাদের হাতে থাকা নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনবিএল) ৬০ শতাংশ শেয়ারের পুরোটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে বিক্রির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রেডিয়েন্টের জন্য এটি তৃতীয় অধিগ্রহণ চুক্তি। দেড় দশকের কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের শীর্ষ দশ ওষুধ কোম্পানির একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নোভার্টিসের এশিয়া অ্যাসপায়ারিং মার্কেট-এর প্রধান কেভিন জু প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, নিজেদের বৈশ্বিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা এনবিএলে তাদের শেয়ার স্থানীয় একটি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নোভার্টিস ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নোভার্টিস ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) যৌথ উদ্যোগে কোম্পানিটি পরিচালিত হচ্ছে।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. নাসের শহরিয়ার জাহেদী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারা এনবিএলে নোভার্টিসের লিগ্যাসি ধরে রাখবেন, যেমনটি তারা ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকায় জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড অধিগ্রহণ করার পর করেছেন।
অবশ্য তিনি এনবিএলের ৬০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণমূল্য প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ, অধিগ্রহণটি এখনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে টিবিএস দুটি পৃথক সূত্রে জানতে পেরেছে, নোভার্টিস এজি চলতি বছরের শুরুর দিকে তাদের শেয়ার প্রায় ২০০ কোটি টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। তখন তাদের সম্ভাব্য ক্রেতা ছিল বেক্সিমকো গ্রুপ।
রেডিয়েন্টের ৬ হাজার ৫০০-রও বেশি কর্মী রয়েছে এবং এর পোর্টফোলিওতে ১০০টির বেশি নিবন্ধিত ব্র্যান্ড ও এক ডজন আন্তর্জাতিক অংশীদার রয়েছে।
নোভার্টিস বাংলাদেশ এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডোজ বাংলাদেশের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ৭৫ শতাংশ রাজস্ব স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য থেকে আসে, বাকি ২৫ শতাংশ আসে আমদানি করা পণ্য থেকে।
নোভার্টিস চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশে স্থানীয় কারখানা থাকা একমাত্র বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি হবে ভারতীয় সান ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান সান ফার্মা বাংলাদেশ।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর শক্তিশালী উত্থানের কারণে বাংলাদেশে বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ প্রতিযোগিতার পিছিয়ে পড়ছে। এ কারণে তারা একে একে এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে।