ব্যাংকঋণের প্রভিশনিং আরও কড়াকড়ি হচ্ছে, বাড়বে ব্যাংকের শক-অ্যাবজর্বিং সক্ষমতা
আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাকটিস অনুযায়ী নতুন প্রভিশনিং ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের ঋণের প্রভিশনিং করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী ঋণের প্রভিশনিং ও শক-অ্যাবজর্বিং সক্ষমতা বাড়বে।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে বলেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ব্যাংকগুলো ঋণ প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড ৯ (আইএফআরএস-৯) পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
বর্তমানে, ব্যাংকগুলো নিয়ম-ভিত্তিক ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং ব্যবস্থা অনুসরণ করছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, নতুন মানদণ্ড ঋণ-ক্ষতি প্রভিশনিং, স্বচ্ছতা এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর আস্থা বাড়াবে। এটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিবেদনের নিয়মের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকি টিবিএসকে বলেন, 'বর্তমানে আমরা কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে রুল-বেজড প্রভিশনিং করে থাকি। সে অনুযায়ী একটি ঋণ নিয়মিত থাকলে তার বিপরীতে ১ শতাংশ প্রভিশনিং করতে হয়, যখন ক্লাসিফাইড হয় তখন স্তরভেদে ২৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং করতে হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ২০২৭ সালের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিসে যাচ্ছি। সে অনুযায়ী কোনো একটা ঋণের খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা আগে থেকেই মেজারমেন্ট করা হবে। এটা ডাইনামিক প্রসেস। এর ফলে ব্যাংকের শক্তি বাড়বে, ব্যাংকের শক-অ্যাবজর্বিং ক্যাপাসিটি বাড়বে। তখন আর প্রভিশনিং করতে গিয়ে ব্যাংকের মূলধনের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে না।'
শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাতে হঠাৎ একটি ঋণ ক্লাসিফাইড হয়ে গেলে প্রভিশনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা অনেকটা বেড়ে যায়। 'এতে ব্যাংককে ব্যর্থ হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রভিশন ডেফারেল নিতে হয়।'
'কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইন্টারন্যাশন প্র্যাকটিস অনুযায়ী ঋণ প্রভিশনিং করবে, এটা ভালো দিক। তবে এর ফলে ব্যাংকের প্রভিশনিং ও ক্লাসিফাইড ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে রয়েছে। তখন ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস ফলো করতে গিয়ে ক্লাসিফাইড ঋণ বেড়ে গেলে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে সমস্যা হবে।'
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ আংশিকভাবে আইএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন করেছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ভুক্ত দেশগুলো, জাপান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা আইএফআরএস-৯ নিয়ে এখন যে রোডম্যাপ দিয়েছি, তা ব্যাংকগুলো আগামী মার্চের মধ্যে তাদের বোর্ডকে জানাবে। নিজেরা প্রস্তুতি নেবে। সক্ষমতা গড়ে তুলবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সক্ষমতা গড়ে তুলবে। তারপর আমরা গাইডলাইন্স দেব, ট্রায়াল রানে যাব, প্যারালাল রান করবো। তারপর রিপ্লেস করে ফেলব বর্তমান ব্যবস্থাকে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন-সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার অনুসারে, যদি সব ধরণের ঋণ স্ট্যান্ডার্ড হয়, তাহলে ব্যাংক বকেয়া ঋণের ওপর ১ শতাংশ প্রভিশনিং রাখবে। ঋণ যদি এসএমএ হিসাবে শ্রেণিকৃত হয়, তাহলে বকেয়া ঋণের ওপর ৫ শতাংশ প্রভিশনিং রাখা হবে।
এছাড়া ঋণ যদি সাব-স্ট্যান্ডার্ড হয়, তাহলে ২০ শতাংশ প্রভিশনিং রাখতে হবে। আর সন্দেহজনক হিসেবে শ্রেণিকৃত হলে ৫০ শতাংশ প্রভিশনিং রাখতে হবে। মন্দ/লোকসানি ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ হলে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং রাখতে হবে।
২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণ তিন মাস বকেয়া থাকার পর খেলাপি হিসবে ক্লাসিফাইড হবে। আগে এ সময় ছিল ছয় মাস।