চামড়াজাত পণ্যে নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য
চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে নারীরা এগিয়ে আসছেন। গতানুগতিক চাকরির পিছনে না ঘুরে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অনেকেই আজ সফল উদ্যোক্তা। তাদের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এসব নারী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে এসে এখন তানিয়ার টার্নওভার ৪ কোটি টাকা
তানিয়া ওয়াহাবের (৪২) জন্ম ঢাকার মধুবাগে। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় টিউশনির জমানো ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন।
রাজধানীর হাজারীবাগে একটি মেশিন আর একজন শ্রমিক নিয়ে 'এথিনি' নামে ১০০ বর্গফুটের ছোট্ট একটি ফ্যাক্টরতে চলছিল তার ব্যবসা।
তানিয়া ওয়াহাব পড়াশোনা করেছেন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে। কিন্তু চাকরির পিছনে না ঘুরে ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল নিজে ভিন্ন কিছু করার।
বর্তমানে তার ফ্যাক্টরির আয়তন ৬৫০০ বর্গফুট, কারখানায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে দুইশ'র অধিক শ্রমিক কাজ করে। চামড়ার জ্যাকেট, জুতা, মানিব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি বানিয়ে বছরে তার টার্নওভার ৪ কোটি টাকার অধিক।
তানিয়া ওয়াহাব শুধু চামড়ার পণ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কৃত্রিম চামড়া, পাট, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ডায়েরির মলাট, কনফারেন্সের ব্যাগ, ওয়ালেটসহ নানা রকম উপহারপণ্য বানাতে শুরু করেন।
তিনি বর্তমানে একটি অনলাইন গিফটশপের (TAN) স্বত্বাধিকারী। ২০০৮ সালে সেরা এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার অর্জন করেন তানিয়া ওয়াহাব।
তারপর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার থেকে নির্বাচিত হয়ে ইতালির মিপেল মেলায় অংশ নেয় তার প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেলোশিপ পান, যেখানে ১৯টি দেশের ১৯ জন নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া পেনসাকোলা সিটির গভর্নরের কাছ থেকে অনারারি সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট লাভ করেন, যাকে ব্যবসায়িক জীবনের অন্যতম অর্জন হিসেবে দেখেন তিনি।
২০১৫ সালে মহিলা পরিষদ থেকে বিশেষ সম্মাননা পান তানিয়া ওয়াহাব, ২০১৬ তে জাপানের টোকিও এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
"করোনার জন্য বেশ কিছু কাজ আটকে থাকলেও হঠাৎই দেশীয় বাজারে আমাদের চাহিদা বেড়ে যায়। এই চাহিদারই জোগান দিচ্ছি এখন। যেহেতু চায়না থেকে অনেক কিছুই এখন আমদানি সম্ভব হচ্ছে না, তাই দেশীয় বাজারে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে", বলেন তানিয়া।
তানিয়া ওয়াহাব বলেন, "বর্তমানে আমি বাটা, এপেক্স, বে-সহ বিভি্ন্ন স্বনামধন্য জুতা ব্র্যান্ডকে পাইকারিভাবে পণ্য সরবরাহ করি। এছাড়াও ইতালি ও কানাডায় আমার ১০% পণ্য রপ্তানি করি। দেশে লেদারের পণ্যের মার্কেট খুবই সম্ভাবনাময়। এর প্রসারের সম্ভাবনা সামনে প্রচুর এবং কাজেরও ক্ষেত্র বেশ বড়।"
তিনি আরও বলেন, "চামড়াশিল্পে একজন নারী হিসেবে ব্যবসা করতে গিয়ে প্রথমে আমাকে বহু সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে স্থায়ী জমিতে কারখানা স্থাপন করতে না পারায় খুবই ভোগান্তি হচ্ছে, ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। সরকারের উচিত চামড়া শিল্পের ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিসিকের মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্লট বরাদ্দ দেয়া।"
শিক্ষক থেকে সেরা এসএমই উদ্যোক্তা রেজবিন হাফিজ
রেজবিন হাফিজের জন্ম গাইবন্ধায়। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন, এরপর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে এমবিএ ও ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেদার ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।
উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে প্রায় ১০ বছর শিক্ষকতা করেছেন রেজবিন। শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে ২০১২ সালে পিপলস নাইফ ইঞ্জিনিয়ারিং নামে চামড়া খাতে ব্যবহৃত ডাইসের (কাটিং নাইফ) কারখানা গড়ে তোলেন।
যখন দেখেন তার কাটিং নাইফ দিয়ে জুতা তৈরী হচ্ছে, তখন ২০১৪ সালে ২ জন কর্মী নিয়ে জুতা তৈরির কাজে হাত দেন রেজবিন। তখন পুঁজি ছিল সাড়ে ৩ লাখ টাকা। জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ চামড়াজাত পণ্য তৈরি করার জন্য আশুলিয়ায় ৫০০ বর্গফুটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস নামের কারখানা গড়ে তোলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার প্রতিষ্ঠানের জুতা। বাড়তে থাকে পাইকারি ক্রেতার চাহিদাও।
বর্তমানে গাইবান্ধা বিসিক শিল্পনগরী ও ধামরাইয়ে বিসিক শিল্প নগরীতে রেজবিন হাফিজ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠানে এখন ১৫০ জন কর্মী কাজ করছে। যেখানে প্রতিমাসে উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার চামড়াজাত পণ্য, যার ৭০ শতাংশই জুতা।
তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য রপ্তানি হয়েছে চায়না, মালয়েশিয়া, জাপান, ভারতে। দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অর্ডার নিয়েও পণ্য তৈরী করে দেয়।
রেজবিন হাফিজ পেয়েছেন বর্ষসেরা মাইক্রো এসএমই উদ্যোক্তা ২০২০ পুরস্কার।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এসএমই পণ্যের স্টলে পণ্য বিক্রি করছেন রেজবিন হাফিজ । মেলার স্টলে তিনি টিবিএসকে বলেন, "ধামরাই বিসিক শিল্প নগরীতে সম্প্রতি ৬ হাজার ৪০০ একর জমি নিয়েছি। বর্তমানে সেখানে সেট দিয়ে ফ্যাক্টরি তৈরী করেছি। ভবিষ্যতে ৬ তলা ফ্যাক্টরি তৈরী করবো। এর জন্য ব্যাংক ঋণ পেতে প্রপোজাল তৈরী করেছি।"
তিনি বলেন, "আমার নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানে পিপল লেদার ট্রেনিং সেন্টারে লেদার গুডসের বিষয়ে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমার পরিকল্পনা গ্রাম অঞ্চলের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরী করা। সেই সঙ্গে মানসম্পন্ন পণ্য দিয়ে দেশের ও দেশের বাইরের বাজার ধরা। নদীভাঙনপ্রবণ এলাকা গাইবান্ধায় বাড়ি হওয়ায় এলাকার মানুষের কাজের সংস্থান তৈরীতে আমি কাজ করছি। হ্যান্ডমেড কাজগুলো নারীদের হাতের সেলাইয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করি, ফিটিংসটা হয় আমার ফ্যাক্টরিতে।"
গ্লোবাল ব্র্যান্ড গড়ার স্বপ্ন দেখেন রুবিনা
পরিবারের সবাই বলছিলেন পড়াশুনা শেষে চাকরি করতে। কিন্তু রুবিনা আক্তারের ইচ্ছা ছিল দেশের পণ্য আন্তর্জাতিভাবে তুলে ধরবে। সেই ইচ্ছা থেকেই ২০১০ সালে 'ডিজাইন বাই রুবিনা' নাম দিয়ে লাইসেন্স নেন। প্রথমে জুট ও পরে লেদার পণ্য তৈরী করেন।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় স্টল নিয়েছেন রুবিনা আক্তার। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। রুবিনা আক্তার বলেন, "প্রথম থেকেই বাসার সবাই আমাকে চাকরি করতে বলতো। আমার মনে হয়েছে আমি দেশের পণ্য রপ্তানি করবো। আমি এক বছর একটা বায়িং হাউজে কাজ করেছি অভিজ্ঞতার জন্য। এরপর আমি ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। কারও কাছে টাকা চাইবো এমন ভাবনা আমার ছিল না। অল্প পুঁজি দিয়ে আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠান এগিয়ে নেয়ার ইচ্ছে আমার। এখন পর্যন্ত আমি কোন ব্যাংক লোন নেইনি।"
ডিজাইন বাই রুবিনার প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের মিরের বাজারে, আর অফিস ঢাকার ফার্মগেটে। তার প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী ভিক্তিতে ১৬ জন কর্মী কাজ করছেন। আর চুক্তিভিক্তিক কাজ করছেন ৩০-৩৫ জন।
পণ্য রপ্তানি করেছেন চায়না, ফিলিপাইন, কাতার, দুবাই, পোল্যান্ডে। রুবিনা বলেন, "ব্যাগ বেশি তৈরী করি আমার প্রতিষ্ঠানে। আর লেদারে ও জুটে যা হয় সব পণ্যই আছে। এখন আগের চেয়ে ফ্যাক্টরি বড় করছি। এতদিন ভাড়ায় ছিলাম, এখন মিরের বাজারে ৮ শতাংশ জমি কিনেছি। সেখানে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো।"
নিজের তৈরী পণ্য নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেন, "আমার পণ্য বিশ্বের প্রতিটি দেশে যাবে। আমার ব্যান্ড সবাই এক নামে চিনবে। কোনদিন পণ্যের ব্রান্ডিংয়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করবো না। আমি আমার পণ্যের কোয়ালিটির জন্য টাকা বিনিয়োগ করবো। আমি ওয়ার্কারদের জন্য বিনিয়োগ করবো। পণ্য ভালো হলে ক্রেতারাই বলবে পণ্য ভালো।"
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৯ সালে মাইক্রো লেবেলে ২য় পুরষ্কার পান রুবিনা আক্তার।
তিনি বলেন, "আমি যদি শতভাগ জ্ঞান অর্জন না করি, তাহলে কীভাবে কোয়ালিটি পণ্য দিব। তাই দেশে প্রয়োজন মানসম্পন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। দেশে ট্রেনিংয়ের জন্য যে ধরনের উপকরণ প্রয়োজন, সেটা এখানে নেই। ভারতে পড়ার সময় মনে হয়েছে, এতকিছু রয়েছে তাদের উদ্যোক্তাদের জন্য! আমাদের এখনই এ খাতে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন।"
৯ দেশে পণ্য রপ্তানি করেছে শাবাব লেদার
ছাত্রজীবন থেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে ছিল মাকসুদা খাতুনের। এ্যাকাউন্টিংয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করে আশা ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইনান্সে এমবিএ এর পাশাপাশি বায়িং হাউজে চাকরি করেন তিনি।
এরপর চাকরি ছেড়ে 'আফরা ফ্যাশন' নামে একটি বুটিক হাউজ প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের সবকিছু ভালোই চলছিল। মাকসুদার স্বামী চাকরির পাশাপাশি এক বন্ধুর সাথে অংশীদারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হ্যান্ড গ্লাভস নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। এরপর তার স্বামীর ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান হয়। বাধ্য হন প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে। তখন মাথার উপরে কোটি টাকার ঋণের বোঝা।
শেষে পরিবারের সবটুকু সঞ্চয় ও কিছু অলংকার বিক্রি করে মাত্র ১৫ লাখ টাকা মূলধন আর ৫ জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু শাবাব লেদার প্রতিষ্ঠানের। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মাকসুদা।
মাকসুদা খাতুন বলেন, "আমরা কাজ করি জেনুইন চামড়াজাত পণ্য নিয়ে। নিজের ছোট প্রতিষ্ঠান হাজারীবাগে প্রায় নিয়মিত ৪৮জন কর্মীর হাতে তৈরী হয় আমাদের পণ্য। কাজ শুরু করার পর এসএমই ফাউন্ডেশন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক থেকে ট্রেনিং নিয়েছি।"
শাবাব লেদার মূলত লেডিসব্যাগ, জেন্টস ব্যাগ, ম্যানিব্যাগ, লং ওয়ালেট, বেল্ট, জ্যাকেট, কি রিং, ফাইল সহ যাবতীয় করপোরেট আইটেম নিয়ে কাজ করে থাকে। এসব প্রডাক্ট এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও।
জাপান, সুইজারল্যান্ড, মরোক্কো, নেদারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কানাডা সহ ৯ দেশে রপ্তানি হয়েছে শাবাব লেদারের পণ্য। পাশাপাশি দোকান ও দেশের অনলাইন বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া করপোরেট অর্ডারওনেয়া হয়ে থাকে।
২০২০ সালে করোনার আঘাতে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য অবিক্রিত রয়ে যায় শাবাব লেদারের। মাকসুদা খাতুন বলেন, "মহামারি করোনায় আমাদের অগ্রযাত্রা থমকে যায়। অনেক অর্ডার বাতিল করতে হয়। পুরোপুরি দুই মাস বন্ধ রাখতে হয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শ্রমিকদের তো বেতন দিতে হয়েছে, ফ্যাক্টরির ভাড়া দিতে হয়েছে। পরবর্তীতে প্রণোদনার ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও প্রাইম ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স থেকে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি। মজুদ থাকা ৬০ শতাংশ পণ্য বিক্রি হয়েছে।"
মাকসুদা খাতুন বলেন, "৬,০০০ ব্যাগের করপোরেট অর্ডার পেয়েছি। প্রতিটি ব্যাগের দাম ৬,৫০০ টাকা। সুইজারল্যান্ডে ২,০০০ পিস ওয়ালেট, ২,০০০ পিস মানিব্যাগ, ২,০০০ পিস চাবি রাখার বাক্সের অর্ডার পেয়েছি। আমার পণ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই যেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।"
তিনি আরও বলেন, "ধীরে ধীরে ব্যবসা আরও বড় করার স্বপ্ন দেখছি, আগে খুবই কম উৎপাদন করতাম, বর্তমানে আমার কারখানায় মাসে ১০ হাজার পিস চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন হয়। আশা করি এক সময় আমি মাসে ৩০-৪০ হাজার পিস উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায়ও পৌঁছাতে পারবো।"
চামড়ার কারখানায় ১০ হাজার লোকের নিয়োগ দিতে চান আয়েশা
আয়েশা সিদ্দিকার (৩৫) জন্ম বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাদবপাশা গ্রামে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট-ওয়েস্ট থেকে অনার্স এবং মালয়েশিয়া থেকে এমবিএ শেষ করে গতানুগতিক চাকরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন নি। দেশে এসে ২ লাখ টাকার স্বল্প পুঁজি ও মাত্র ৭ জন শ্রমিক নিয়ে ২০১৬ সালে শুরু করেন চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা।
বর্তমানে রাজধানীর ভাটারা ১০০ ফিট এলাকায় 'ম্যাটস কটেজ লিমিটেড' নামে রয়েছে তার চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা, যেখানে বর্তমানে প্রায় ৫০ জন কারিগর ও শ্রমিক কাজ করেন। বছরে আয়েশা সিদ্দিকার ফ্যাক্টরিতে বিক্রি হয় ৪ কোটি টাকার অধিক।
তরুণ ও সফল এই নারী উদ্যোক্তা টিবিএসকে সাক্ষাৎকারে বলেন, "করোনায় আমার বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারপরও আমি দমে যাইনি। আমি আশাবাদী, একদিন আমার কারখানায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে, ইনশাআল্লাহ আমার মাসিক বিক্রি হবে ৫-৬ কোটি টাকা।"
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ২০০৫ সালের দিকেই মূলত চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসেন নারীরা। এসএমই উইমেন এন্টারপ্রেনিউরস ডিরেক্টরি ২০১৫ সালে হিসেব অনুযায়ী, দেশে লেদার অ্যান্ড লেদার গুডসের নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল শতাধিক। আমরা অনুমান করছি, বর্তমানে কম করে হলেও এ খাতে ৩০০ এর অধিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে।"
তিনি জানান, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের এ খাতকে আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পখাত হিসেবে গড়ে তুলতে নারী উদ্যোক্তা এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। আগামী এক বছরে মধ্যে এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্তত নতুন ১০০ জন যেন বিদেশে ভোগান্তি ব্যতীত পণ্য রপ্তানি করতে পারে সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে এসএমই ফাউন্ডেশন।