সারে ভর্তুকি বাড়তে পারে তিনগুণ
আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। বাড়তি ব্যয়ের এই চাপ থাকলেও আপাতত সারের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেই সরকারের। তবে দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির থাকলে কতদিন এভাবে ভর্তুকি দেয়া সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সোমবার সচিবালয়ে সারের মজুদ, দাম, ভর্তুকি সহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ৭৭১৭ কোটি টাকা ভর্তুকি লেগেছে সেখানে চলতি অর্থবছরে ৯৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরও অতিরিক্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানান মন্ত্রী।
মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিশাল অংকের ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে এ বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এতো ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং খাদ্যের দামও বাড়বে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, বেলারুশ থেকে সবচেয়ে বেশি সার আমদানি করা হত, এখন সেটা বন্ধ। এখন মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ রাশিয়া, ভারত সহ কয়েকটি দেশ থেকে সার আমদানি করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের তুলনায় তিনগুণ দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো, করোনার সময় খনিতে কাজ বন্ধ থাকা, কাচামালের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়া।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সংকট দ্রুত কাটবে আশা করে মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "আমরা এই ভর্তুকি দিয়ে যাবো। অনেকেই উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হওয়ার কথা বললেও আমরা এখনই সারের দাম বাড়ানোর কোন চিন্তা করছি না। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে আমরা এটা টানতে পারবো কি না, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।"
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, "ভর্তুকি কমাতে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপও রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারের দাম তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে অর্থাৎ কৃষক পর্যায়ে সারের মূল্য বৃদ্ধি করেনি।
সরকার ৯৬ টাকা কেজি দরের ইউরিয়া সারে ৮২ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, ৭০ টাকার টিএসপিতে ৫০ টাকা, ৫৪ টাকার এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ৯৩ টাকার ডিএপিতে দিচ্ছে ৭৯ টাকা। এ কারণে প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা এবং ডিএপি ১৬ টাকায় বিক্রির কথা। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকমাস ধরেই স্থানীয় বাজারকে অস্থিরতার মধ্যে রেখে কৃষকদের কাছ থেকে এক-দু'টাকা করে বাড়তি দাম নিচ্ছে ডিলাররা।
চলতি অর্থবছরে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সারের চাহিদা আছে। এই চাহিদার বিপরীতে সরকারের সারের যা মজুদ রয়েছে তাতে বোরো মৌসুমের পর আগামী আমন মৌসুম পর্যন্ত কোন সংকট হবে না বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।