১৫ বছরেও শুরু করা যায়নি সিলেট থেকে সাইট্রাস গোত্রের ফল রপ্তানি
ক্যাংকারস ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে পড়েছিল সিলেট থেকে লেবু জাতীয় ফল (সাইট্রাস গোত্রের) রপ্তানি। দীর্ঘ ১৫ বছরেও ক্যাংকারস মুক্ত করে এসব ফল রপ্তানি শুরু করা যায়নি। ফলে বছরে প্রায় ছয়শ কোটি টাকার বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
সিলেট থেকে লেবু, সাতকরা, জাড়া, আদা জামিরসহ সাইট্রাস গোত্রের বিভিন্ন ফল যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হতো। বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ফল রপ্তানি হতো। তবে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরাও।
সিলেট সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সাইট্রাস গোত্রের ফল বাগান ক্যাংকারস মুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ বাগান ক্যাংকারস মুক্ত করা হয়েছে। তবে রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ফল বাগান ক্যাংকারস মুক্ত করা হলেও এখনো ফল রপ্তানির অনুমতি মেলেনি।
জানা যায়, ২০০৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সরকারী স্বাস্থ্য সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট ফুড রিসার্চ এসোসিয়েশনের (ডেফরা) নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ হয়ে পড়ে সিলেট থেকে সাইট্রাস গোত্রের ফল রপ্তানি।
সিলেটের রপ্তানিকারকরা জানান, আশির দশক থেকে সিলেট থেকে সাইট্রাস গোত্রের ফলের মধ্যে জাড়া লেবু, এলাচি লেবু, নাগা মরিচ, ডেওফল, জাম্বুরা, তৈয়কর, সাতকরা, আদা জামির প্রভৃতি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকায় রপ্তানি হতো। সিলেটের ফলের মধ্যে সাতকরা আর জারা লেবুর চাহিদাই সর্বাধিক। কিন্তু ২০০৭ সালের জুলাই মাসে হিথ্রো বিমানবন্দরে ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট ফুড রিসার্চ এসোসিয়েশন (ডেফরা) এসব পণ্যে ক্যাংকারস নামের এক ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করে। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে ফল রপ্তানি।
রপ্তানিকারকদের মতে, ইউরোপে বাংলাদেশের সাইট্রাস গোত্রের ফলের বিশাল বাজার রয়েছে। এক্ষেত্রে সাইট্রাস ক্যাংকারস জটিলতা দূর করে সিলেটে সরকারি উদ্যোগে সবজি রপ্তানি অঞ্চল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা। সাইট্রাস গোত্রের ফল ক্যাংকারস মুক্ত করা গেলে বছরে হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব বলে জানান রপ্তানিকারকরা।
এ ব্যাপারে সিলেট সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এমএইচএম বোরহান উদ্দিন ভূইয়া বলেন, "সিলেটের মাটি সাইট্রাস গোত্রের ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু এখানকার চাষীরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় তাদের বাগানে ক্যাংকারসসহ নানা ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়।"
তিনি বলেন, বাগান বেশি পুরনো হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিতভাবে বাগান তৈরি, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রেখে গাছ লাগানো, নিয়ম মেনে ওষুধ ব্যবহার না করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব থেকেই সাধারণত ক্যাংকারস ভাইরাসের বিস্তার ঘটে। নিজেদের বাগান ক্যাংকারস মুক্ত রাখতে আমরা চাষীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগেও সহস্রাধিক চাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সিলেট অঞ্চলের বেশিরভাগ বাগানই এখন ক্যাংকারস মুক্ত করা গেছে। তবে পুনরায় রপ্তানি শুরুর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
জালালাবাদ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোটার্স গ্রুপের সভাপতি হিলকিল গুলজার বলেন, বন্ধ হওয়ার আগে সিলেট থেকে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সাইট্রাস গোত্রের ফল রপ্তানি হতো। এই ১৫ বছরে বাজার আরও বড় হয়েছে। এতে রপ্তানির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতো।
তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ এই বাজার হারাতে বসেছে। ভারত-ভুটানসহ কয়েকটি দেশ বাজার দখল করে নিচ্ছে। আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বারবার ধর্ণা দিয়েও রপ্তানি চালু করতে পারছি না। এই মাসে কৃষিমন্ত্রী সিলেট চেম্বারে আসবেন। তখন এই বিষয়টি মন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এইচএম এরশাদুল আলম বর্তমানে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে আছেন। এই কার্যালয়ের কর্মকর্তা হাসিব আহমদ বলেন, "সাইট্রাস ফল রপ্তানির জন্য ডেফরার অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন। এই অনাপত্তিপত্রের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আশা করি শীঘ্রই ফল রপ্তানি শুরু হবে।"