সমুদ্রপথে বাড়ছে ফল রপ্তানি, যুক্ত হলো পেয়ারা ও তরমুজ
ফল ও সবজি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডিউস লিমিটেড চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ১৮ মার্চ দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দরে ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা রপ্তানি করে। গত চার মাসে প্রতিষ্ঠানটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে তিনটি চালানে মধ্যপ্রাচ্যে ৩৩.৪৭ মেট্রিক টন পেয়ারা রপ্তানি করেছে।
আকাশপথে আগে রপ্তানি হলেও সমুদ্র বন্দর দিয়ে এমন কন্টেইনারের মাধ্যমে পেয়ারা রপ্তানি হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। পরীক্ষামূলক পেয়ারা রপ্তানি কার্যক্রমের পর সমুদ্রপথে পুরোদমে পেয়ারা রপ্তানির বিষয়ে পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুধুমাত্র পেয়ারা নয়, সমুদ্রপথে দেশীয় ফল রপ্তানির তালিকায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে তরমুজ। গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে চট্টগ্রামের সাত্তার ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় ১৩.৩২ মেট্রিক টন তরমুজ রপ্তানি করেছে। এর রপ্তানি মূল্য প্রায় চার হাজার মার্কিন ডলার।
ঢাকা ভিত্তিক সবজি রপ্তানিকারক গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডিউস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাহেদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, সমুদ্রপথে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি পেয়ারার চালান রপ্তানি করেছি। চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ থেকে এসব পেয়ারা সংগ্রহ করা হয়েছে। সমুদ্রপথে ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পেয়ার মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছে।
বাংলাদেশ ফল ও সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) তথ্য মতে, বর্তমানে দেশীয় ফল রপ্তানির তালিকায় রয়েছে কাঁঠাল, আম, লিচু, আনারস, পেয়ারা, জলপাই, তরমুজ সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল। আকাশপথে মৌসুমী ফল সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। তবে সরকার সঠিক পরিকল্পনা নিলে সমুদ্রপথেও দেশীয় ফল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সমিতির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১১৭ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ফল এবং সবজি রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বিভিন্ন মৌসুমী ফল। সে হিসেবে বছরে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ফল রপ্তানি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ আমেরিকা সহ বিভিন্ন উন্নত দেশেও বাংলাদেশের মৌসুমী ফল রপ্তানি হয়। বাংলাদেশি অধিবাসী অধ্যুষিত সকল দেশেই ফল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
ফল রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরমুজের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় তরমুজ রপ্তানির সুযোগ বেশি। কারণ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য জাহাজীকরণের পর মাত্র চার দিনের মধ্যে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব। তাই সরকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে রপ্তানি খাতে নতুন পণ্যের সংযোগ ঘটাতে হবে।
প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশন জানায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রতি বছর গোল আলু, বাঁধাকপি, কচুর লতি সহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই সহ বেশ কয়েকটি দেশে। এছাড়া সমুদ্রপথে 'ফ্রোজেন আইটেম' হিসেবে কাঁঠালের কোষ, আনারস রপ্তানি হয়।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে তরমুজ রপ্তানিকারক সাত্তার ইন্টারন্যাশনালের সিএন্ডএফ এজেন্ট স্কাই সিল্যান্ড শিপিং লাইনের কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তরমুজ রপ্তানির ঘটনা এবারই প্রথম। বগুড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এসব তরমুজ। একই সাথে ৮.৭ মেট্রিক টন টমেটো রপ্তানি করা হয়। ভবিষ্যতে আরো তরমুজ রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে সাত্তার ইন্টারন্যাশনালের।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, 'বর্তমান ডলার সংকট পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকা বড় হওয়ার খবর নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মৌসুমী ফলের রপ্তানি বৃদ্ধি করা গেলে দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল হবে।'
সাতক্ষীরার সবজি এবং ফল রপ্তানিকারক শাওন ট্রেডার্সের সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, 'ইংল্যান্ড এবং পর্তুগালে আম রপ্তানির বিষয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি। আকাশপথে শীঘ্রই আম রপ্তানি করতে পারবো বলে আশা করছি।'
তিনি আরো বলেন, সমুদ্রপথে আমরা নিয়মিত আলু এবং বাঁধাকপি রপ্তানি করছি। প্রতি কেজি আলুর রপ্তানিমূল্য প্রায় ২৫ টাকা।
প্ল্যান্ট কোয়োরেন্টাইন স্টেশনের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে টমেটো রপ্তানি শুরু হয় ২০২১ সালের শুরুতে। এরপর নিয়মিত সমুদ্রপথে টমেটো রপ্তানি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১৬৩.১৯ মেট্রিক টন টমেটো রপ্তানি করেছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের রোগতত্ত্ববিদ সৈয়দ মুনিরুল হক টিবিএসকে বলেন, দেশে তরমুজ, পেয়ারা সহ দেশীয় ফলগুলোর ফলন বাড়ছে। এসব দেশীয় ফল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, কৃষিজ পণ্য রপ্তানিতে প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের অনুমোদন প্রক্রিয়া এখন শতভাগ অনলাইন কেন্দ্রিক। তাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই রপ্তানিকারকরা এই সুযোগ নিতে পারে।