ইউক্রেন থেকে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত, দুই সপ্তাহে রডের দাম বেড়েছে টনে ৫ হাজার টাকা
আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে আরো এক দফা বেড়েছে নির্মাণপণ্য এম এস রডের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি এম এস রডের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের সরবরাহ সংকট ও যুদ্ধের কারণে রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন থেকে স্ক্র্যাপ রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় রডের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে এই খাতের উদ্যোক্তারা।
তবে রড ব্যবসায়ীরা বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে বাড়তি দামে কেনা কাঁচামাল এখনো কারখানায় আসেনি। এখন যেসব কাঁচামাল দিয়ে রড তৈরি হচ্ছে তা আগের কেনা। ফলে এই মুহুর্তে রডের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
ইস্পাতের বাজারে বর্তমানে তিন কোয়ালিটির এম এস রড রয়েছে। এরমধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৭৫ গ্রেড (৫০০ টিএমটি), সেমি অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৬০ গ্রেড (৫০০ ওয়াট) এবং সাধারণ বা ৪০ গ্রেডের রড রয়েছে বাজারে।
গত দুই সপ্তাহে ইস্পাতের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ৭৫ গ্রেডের (৫০০ টিএমটি) রডের দাম। গত দুই সপ্তাহে প্রতিটনে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে সর্বোচ্চ গ্রেডের এই রডের দাম।
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতিটন ৭৫ গ্রেডের রড বিক্রি হয়েছে ৮১-৮৪ হাজার টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৭৬-৭৯ হাজার টাকায়।
বৃহস্পতিবার বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের (টিএমটি) বিএসআরএম ৮৪ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৮৩ হাজার টাকা, একেএস ও জিপিএইচ ৮২ হাজার টাকা, গোল্ডেন, এসএএসএম, শীতলপুর, এইচএম ও বায়েজিদ স্টিল ৮১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে বাজারে বিএসআরএম ৭৯ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৭৮ হাজার টাকা, একেএস ও জিপিএইচ ৭৭ হাজার টাকা, গোল্ডেন, এসএএসএম, শীতলপুর, এইচএম ও বায়েজিদ স্টিল ৭৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে আরো এক দফা বেড়েছে সেমি অটো ও সাধারণ গ্রেডের বাজারও। এরমধ্যে সেমি অটো মিলের ৬০ গ্রেডের (৫০০ওয়াট) রডের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটন ৬৮-৬৯ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়ে ৭৩-৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেমি অটো এম এস রডের মধ্যে বিএম, আল ছাফা, রাইজিং, খলিল, বলাকা এবং আম্বিয়া, পেনিনসুলা ও মানতি স্টিলের রড রয়েছে বাজারে।
একই সময়ে ৭ হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে সাধারণ ৪০ গ্রেডের প্রতিটন এম এস রড বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭১-৭২ হাজার টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে একই মানের রড ৬৭-৬৬ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে ইস্পাতের পাশাপাশি ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল বিলেট, প্লেইট ও স্ক্র্যাপের দামও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিটন স্ক্র্যাপ ৬০ হাজার টাকা, প্লেট ৬৪ হাজার টাকা এবং বিলেট ৭০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
দুই সপ্তাহে আগে স্ক্র্যাপ ৫৬ হাজার টাকা, প্লেট ৬১ হাজার টাকা এবং বিলেট ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজার দর অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে স্ক্যাপ তৈরির কাঁচামালের দাম টনে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেএসআরএম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (সেলস এন্ড মার্কেটিং) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, "স্ক্র্যাপ আমদানির অন্যতম দেশ ইউক্রেন। বাংলাদেশে ইউক্রেন থেকে প্রচুর স্ক্র্যাপ আমদানি হয়। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সংকটের কারণে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের বুকিং দর উর্ধ্বমুখী। এরমধ্যে ইউক্রেন সংকটে দেশটি থেকে স্ক্র্যাপ রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।"
"এছাড়া একের পর এক জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে চলেছে। এতে দেশিয় বাজারে নির্মাণ পণ্য রডের দামে আগের চেয়ে আরো একদফা বৃদ্ধি পেয়েছে," বলেন তিনি।
গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের বুকিং দর অনেক বেড়ে গেছে। একমাস আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের বুকিং দর ছিল ৬০০ ডলারের নিচে। একমাসের মধ্যে ২০-৩০ ডলার বেড়ে বর্তমানে প্রতিটন স্ক্র্যাপের বুকিং দর ৬২০-৬৩০ ডলার।"
তিনি আরো বলেন, " এমনকি বর্তমানে বাড়তি দরেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দেশিয় বাজারে পণ্যটির দামে প্রভাব পড়েছে।"
এছাড়া এই মুহুর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে স্ক্র্যাপসহ বহু পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে এম এস রডের দাম উর্ধ্বমুখী। এই সময়ে দেশিয় বাজারে পণ্যটির দাম টনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম বেড়েছে আরো ৫ হাজার টাকা।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে কাঁচামালের যেই পরিমান দাম বেড়েছে, দেশিয় বাজারে রডের দাম বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারি রড ব্যবসায়ী মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম আরিফুজ্জামান বলেন, "আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে বাড়তি দামে কেনা কাঁচামাল এখনো কারখানায় আসেনি। এখন যেসব কাঁচামাল দিয়ে রড তৈরি হচ্ছে তা আগের কেনা। ফলে এই মুহুর্তে রডের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক।"