১০০% বিদ্যুতায়ন যেভাবে গ্রামীণ চিত্র বদলে দিয়েছে
এক দশকের বেশি সময় আগে বিজিবি থেকে অবসর নেন ভোলার জাহানপুরের নাসির উদ্দিন। এরপর পেনশনের ১২ লাখ টাকায় বিভিন্ন ব্যবসায় ভাগ্যোন্নতির চেষ্টা করেলেও, কোনোটিতেই সাফল্য পাননি।
গ্রামে কৃষিকাজ লাভজনক না হওয়ায় টাকা ব্যাংকে রেখেই কাটাতেন অলস সময়।
তারপর এলো ২০১৪ সাল, সে বছর জাহানপুর গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছায়। পুরো গ্রাম পায় রাতের আঁধারেও আলো ঝলমলে হওয়ার সুবিধা। কিছুদিন ভাবনা-চিন্তার পর বাড়ির প্রাঙ্গণে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগে পোলট্রি খামার গড়ে তুলেন নাসির উদ্দিন।
অল্প সময়ের মধ্যে, তার উদ্যোগটি সফল প্রমাণিত হয়- বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় এবার তিনি সহজেই তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত হ্যাচিং (ডিম থেকে ছানা ফোটানো) সরঞ্জাম চালাতে সক্ষম হন।
গ্রামীণ জীবন ও অর্থনীতিতে কীভাবে বিদ্যুত একটি যুগান্তকারী সুবিধা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল- এটি তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের পরিধি দ্রুত সম্প্রসারণে বাংলাদেশের চার দশকের চেষ্টা- ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনীতিতে লভ্যাংশ দিতে শুরু করেছে।
এভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ একটি গ্রামকে বদলে দিয়েছে – শিশুদের পড়ার টেবিল করেছে আলোকিত, মোবাইল ফোন কীভাবে চার্জ হবে সেই উদ্বেগ দূর করেছে এবং যুবকদের পোলট্রি খামার বা ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ স্থাপনে সহায়তা করেছে। বিদ্যুতের ছটা গ্রামের প্রত্যন্ততম অঞ্চলেও জীবনকে দ্রুত এবং সহজ করে তুলেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে মানুষের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখছে। ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য ও ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং সেগুলির সহায়ক পরিষেবার ব্যবসাকেও চাঙ্গা করেছে।
এরপর আসুন ফিরে আসা যাক বর্তমানে, এই ২০২২ সালে। এখন পোলট্রি খামার ছাড়াও মাছ চাষ করেও সাফল্য মুঠোবন্দী করেছেন নাসির। ব্যবসায় তার মোট মূলধন এক কোটি টাকার বেশি। ফিড মিল ও হ্যাচারি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করছেন ।
নাসির উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিদ্যুতের সুবিধাই আমাকে উদ্যোক্তা বানিয়েছে। অনেক মানুষকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছি। নিজের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। "
অবসর কাটাতে চাকরি ছাড়ার সময়ই একটি সাদাকালো টেলিভিশন কিনে গ্রামে ফেরেন নাসির। গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায়- তখন টিভি চালাতে হতো ব্যাটারিতে। ১৩ কিলোমিটার দূরে উপজেলা শহর থেকে সপ্তাহে একবার ব্যাটারি চার্জ দিয়ে আনতে হতো। একবারের চার্জে সপ্তাহে দুইবার খবর এবং এক-দুটির বেশি অনুষ্ঠান দেখতে পেতেন না বলেও জানান তিনি।
দশ বছর আগে রাত নামলেই নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ডুবে যেত সাড়া গ্রাম। তখন শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহে বেশি গুরুত্ব থাকায়, রাত নামলেই থমকে যেত বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের প্রাণচঞ্চলতা।
কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের কল্যাণে পরিস্থিতি আমূল বদলে গেছে।
২০১২ সাল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারেরও দ্রুত বৃদ্ধি হয়েছে, কারণ গ্রিড বিদ্যুতের সংযোগ সুবিধা পেয়েছে মোট গ্রামীণ পরিবারের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ। সৌরশক্তি ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার প্রায় ৭৩ লাখ মানুষকে দেয় সৌরবিদ্যুতের সংযোগ- যা বাল্ব জ্বালানো বা মোবাইল ফোন চার্জ করার জন্য যথেষ্ট।
অন্যদিকে, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে গ্রিড বিদ্যুতের সংযোগ সম্প্রসারণের দৃশ্যপটও পরিবর্তন হয়েছে। সংযোগের সুবিধা পেয়ে পল্লীবাসী মানুষ তাদের আয় বাড়ানোর নতুন উপায় খুঁজে পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ১৯৭৭ সালে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় একটি বিস্তৃত গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি চালু করার আগপর্যন্ত বিদ্যুতকে শহুরে মানুষের একটি বিশেষ সুবিধা বলে মনে করা হতো।
এখন, উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ির চরবাসী সেখানে অটোরিকশা চার্জার তৈরির কারখানা রয়েছে বলে গর্ব করতে পারে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ৮০টি কমিউনিটি সমিতির মাধ্যমে দেশজুড়ে তাদের সংযোগ সেবা দেয়। এমনই একটি সংগঠন- গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শেখ মনুয়ার মোর্শেদ বলেন, "গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলার চরের বাসিন্দাদের এখন আর সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে হয় না; কারণ তারা গ্রিড বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ফলে বাড়িতে টিভি-ফ্রিজ চালাতে পারছেন, উদ্যোক্তারা রাইস মিলসহ নানান ব্যবসা স্থাপনে সহায়তা পাচ্ছেন।"
মোট ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৬১টি উপজেলায় এখন তাদের ১০০% বিদ্যুৎ কাভারেজ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআরইবি। এটি ২০২১ সালের মধ্যে সর্বজনীন বিদ্যুৎ পরিধি বিস্তারের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল।
২০১০-২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুসারে, এক দশকের মধ্যে তিনগুণ বৃদ্ধির সুবাদে দেশের সকল মানুষ এখন বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে।
অন্যদিকে, মাথাপিছু আয় ৭৫০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২,৯০০ ডলার। এক দশক আগে গ্রামীণ অর্থনীতি ৭ লাখ কোটির হলেও- এখন তা ২৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের প্রবর্তনও গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
উদাহরণস্বরূপ, বলা যায় রাজশাহীর বাগমারার যুবক ইদ্রিস আলীর কথাই। তিনি দারিদ্র্যের কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। এখন তিনি ইজিবাইক চালিয়ে দিনে ৬০০-৭০০ টাকা আয় করেন।
"আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার ফলেই আজ ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারি"- বলেন ইদ্রিস।
দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ইজিবাইকে আয়ের মাধ্যম খুঁজে পেয়েছেন এবং দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
গত এক দশক দেশের আইসিটি (তথ্যপ্রযুক্তি) শিল্পও বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। এখন সরকারের কাছে নিবন্ধিত দুই হাজারের বেশি আইসিটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্পটি এক লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
আইসিটির উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন এ শিল্প-সংশ্লিষ্টরা। একই সময়ে, ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টারগুলিও বিদ্যুতায়নের একটি বড় সুবিধা হয়ে উঠেছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
গবেষণা সংস্থা- পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ২০১০ সালের পর গত এক দশকে দেশে বিদ্যুৎতের ব্যবহার ৫-৬ গুণ বেড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আবাসনে পরিবর্তন এসেছে। কৃষি, মৎস ও প্রাণী খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।"
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণের সুবাদেই মূলত গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় এক বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়া বিদ্যুতায়নের সাথে তাল মিলে চলছে দ্রুত নগরায়ন, এতে দেশজুড়ে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন- এফবিসিআই- এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মিনিষ্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্রবৃদ্ধিতে বিপুল অবদান রেখেছে, এর সূত্রে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের যাদুকরী প্রভাব মূল্যায়নকারী আমেরিকার কিছু গবেষণার সংক্ষিপ্তসার বলছে, এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ৭ শতাংশ, কর্মসংস্থান ২৫ এবং আয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশে গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের অবদান সম্পর্কে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অব বিজনেস জার্নালের জন্য করা ২০২১ সালের একটি বিশ্লেষণ পরামর্শ দেয় যে বিদ্যুতায়ন ৮১% পরিবারের কেরোসিন ব্যবহার কমিয়ে, কার্বন নির্গমন কমাতেও অবদান রাখছে।
বিদ্যুতায়ন সাপ্তাহিক কাজের সময় ২.২১ ঘন্টা বৃদ্ধি করে, শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যায় অধ্যয়নের সময় গড়ে ২১ মিনিট বাড়ায়। গবেষণাটি বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্তরের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগের ধারাবাহিকতাকেও সমর্থন করছে।
কৃষি ও পোলট্রি শিল্পে নীরব বিপ্লব:
২০১৫ সালে বিদ্যুৎ পেয়ে লক্ষীপুরের চর মনসা গ্রামে রাইস অ্যান্ড সয়াবিন প্রসেসিং মিল করেন নূরনবী। ফলে গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল পরিবহনের ব্যয় কমার পাশাপাশি, কমেছে সময়, পাচ্ছেন ন্যায্যমূল্য।
নূরনবী বলেন, বিদ্যুৎ না পেলে এতবড় মিল চালানো মোটেও সম্ভব হতো না। বর্তমানে তার কারখানায় প্রায় ৩০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে।
বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে নূরনবীর মতোই গ্রামীণ পর্যায়ে রাইস মিল স্থাপন হয়েছে সারাদেশেই।
এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, গত এক দশকে দেশে খাদ্যশস্য ও পুষ্টি উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ধান, ফল ও শাকসবজির উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে ছোট মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার টন, যেটা এখন আড়াই লাখ টনে পৌঁছেছে।
বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের মাছের চাষাবাদ। এক দশক আগে হ্যাচারির সংখ্যা ছিল ১০০টি হলেও তা এখন প্রায় ১,০০০। পোলট্রি খাতে বিনিয়োগ ১০-১২ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩৫-৪০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এখন ডিমের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এসেছে। গরুর মাংসেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে চলেছে। শুধু পোলট্রি খামাড়ের সংখ্যাই ২০ লাখের বেশি। সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পেও রয়েছে ৫০ হাজারের অধিক ফার্ম।
দেশি মুরগি, গরু, মহিস, ছাগলের তুলনায় অনেক কম মূল্যে পাওয়ার পাওয়ার পাশাপাশি মানুষের প্রোটিনের বড় সোর্স হয়ে উঠেছে। এখন ডিমের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এসেছে। স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসছে গরুর মাংশেও। শুধু পোলট্রি ও খামাড়ির সংখ্যাই ২০ লাখের বেশি। কর্মসংস্থান অন্তত ৫০ লাখ মানুষের। সরকারের "একটি গ্রাম, একটি খামার" প্রকল্পেও রয়েছে ৫০ হাজারের অধিক ফার্ম- যোগ করেন তিনি।
পাঁচগুণ বড় হয়েছে কেবল শিল্প:
গত এক দশকে দেশজুড়ে বিদ্যুতায়নের প্রসার, বিপুল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ক্রমবিকাশমান শিল্পগুলোর চাহিদায় স্থানীয়ভাবে বৈদ্যুতিক কেবল প্রস্তুতের শিল্প ২ হাজার কোটি থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল কেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান টিবিএসকে বলেন, বড় ব্র্যান্ডসহ ১২০টিরও বেশি কোম্পানি মোটা বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এ খাত ৫০,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
এ শিল্পকে কেন্দ্র করে বিআরবি, বিবিএস, পারটেক্স, প্রাণ-আরএফএল, এসকিউ, প্যারাডাইস, ওয়ালটনসহ বড় বড় শিল্পগ্রুপ তৈরি হয়েছে।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক খাতে সৃষ্টি হয়েছে ১০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান:
গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক বিদ্যুতায়ন মাত্র এক দশকের মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারকে পাঁচগুণ প্রবৃদ্ধিতে নিয়ে গেছে।
পাখা, আলো, সুইচ, সার্কিট ব্রেকার, কেবল এবং জেনারেটরের মতো বৈদ্যুতিক পণ্য বিক্রির জন্য, ২০১০ সাল থেকে সারা দেশে প্রায় ৬০ হাজার খুচরা দোকান গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইনুল ইসলাম ভূইয়া টিবিএসকে বলেছেন, ওয়ালটন, আরএফএল, এনার্জিপ্যাক, এসিআই, বিডি ল্যাম্পস, মোহাম্মদী ইলেকট্রিক, সুপার স্টার, বিআরবি, বিবিএস, পারটেক্স, প্যারাডাইস এবং মাইওয়ানের মতো অনেক কোম্পানি বৈদ্যুতিক পণ্য তৈরিতে এগিয়ে এসেছে। অন্তত ৩ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও এতে উদ্যোগী হয়েছেন।
উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত গত এক দশকে অন্তত ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাদের একটি বড় অংশ গ্রাম থেকে আসা মানুষ-সেকথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পণ্যের সাথে সাথে এখন বিলাসি পণ্যের চাহিদাও দেখা দিচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন শিল্পের কল-কারখানার বিপুল চাহিদা তো রয়েছেই।
অন্যদিকে, দেশে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্সের বাজার এখন ৩০ হাজার কোটি টাকার। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি এতে নতুন বিনিয়োগে করছাড়ের সুবিধা শিল্পটির সহায়ক শক্তি হয়ে, স্থানীয় পর্যায়ে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকে বেগবান করেছে। ফলে এই এক দশকে মোবাইল, রেফ্রিজারেটর, এসি, ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক সুইং মেশিন, মাইক্রোওভেন, ব্লেন্ডারসহ হোম অ্যাপ্লায়েন্স মতো পণ্যের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয় জায়ান্ট স্যামসাংইয়ের পণ্য প্রস্তুত ও বিপণনকারী ফেয়ার গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার মেসবাহ উদ্দিন বলেন, এ সময় দেশে কারখানা করেছে দেশি-বিদেশি অন্তত ১৪টি বড় ব্র্যান্ড। এতে প্রত্যেক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ৫ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে বিদ্যুতের প্রসার ও মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনের কারণেই ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এসব পণ্য মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্রও পাল্টে দিয়েছে এসব পণ্য।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুতে সহায়তা করেছেন টিবিএস- এর লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সানা উল্লাহ সানু, কুমিল্লার তৈয়বুর রহমান সোহেল, বগুড়ার খোরশেদ আলম, রাজশাহীর বুলবুল হাবিদ এবং বরিশালের জহির জুয়েল