ঋণের সুদে আয়কর মওকুফ করা হবে না আর
ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত, যে কোনো কারণে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এতদিন যেসব কোম্পানি ওই ঋণের সুদ থেকে অব্যাহতি পেয়ে খুশি হতেন, তাদের জন্য আগামী বাজেটে দুঃসংবাদ আসছে। এতদিন তারা ওই মওকুফ হওয়া সুদের ওপর কর ছাড় পেলেও আগামী বছর থেকে হয়ত ছাড় পাবেন না। আগামী বাজেটে অর্থ বিলে এমন একটি প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে সরকার। অবশ্য ব্যক্তি করদাতারা এ ধরনের ছাড়ের ওপর যথারীতি কর অব্যাহতি পাবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের যোগসাজশে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া এবং পরবর্তীতে তা মওকুফ করে দেওয়ার বা ঋণের সুদ মওকুফ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়; তাই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে তা অনিয়ম ঠেকাতে কিছুটা হলেও কাজে দেবে।
অবশ্য অনিয়মকারী নন এবং প্রকৃত অর্থেই যারা ব্যবসায়ে লোকসানের মুখে পড়ে ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাদের জন্য এটি বাড়তি চাপ তৈরি করবে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে 'অমানবিক'। কেননা, একটি কোম্পানি কোন পর্যায়ে গিয়ে খেলাপি হয়, তা বুঝতে হবে। এমন উদ্যোগ মোটেই ব্যবসাবান্ধব হবে না।
বর্তমানে ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিনেন্সের ১৯ (১১) নং ধারা অনুযায়ী, কোনো করদাতার ব্যাংক ঋণ বা সুদ মওকুফ করা হলে এর ওপর আয়কর ধার্য হবে না। সেই হিসেবে ব্যক্তি এবং কোম্পানি, উভয় করদাতাই এ ধরনের মওকুফের ওপর কর অব্যাহতি পেয়ে আসছিলেন।
তবে গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি হচ্ছে। ব্যক্তির চাইতে কোম্পানির কাছে ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ব্যাংকগুলো ঋণের মূল পরিমাণ মওকুফ করতে পারে না। কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়ে গেলে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ওই সুদের পুরো বা আংশিক অংশ মাফ করতে পারে।
অনেক সময় কোম্পানি লোকসানসহ আরও অনেক পাারিপার্শ্বিক কারণে ঋণখেলাপি হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হওয়ার বিষয়টি বেশ আলোচিত। অভিযোগ রয়েছে, অনেকে কারসাজি করে ঋণ নিয়ে নানান কায়দায় খেলাপি হয়ে যান। এরসঙ্গে কখনো কখনো ব্যাংকেরও হাত থাকে। তখন ব্যাংকগুলো তাদের ঋণের সুদ মাফ করে দেয়। এই অর্থের ওপর কর অব্যাহতি থাকায় কাজটি খুবই সহজ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের একজন ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ডিসিটি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কখনো কখনো অনিয়ম করে কিংবা ব্যাংকের যোগসাজশে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয় এবং ব্যাংক সুদ মাফ করে দেয়। অনেক সময় কোম্পানির আড়ালে নিজেরা নিজেরাও এ কাজ করে থাকতে পারে। এখন ওই সুদের টাকা আয় হিসেবে গণ্য হয়ে, তার ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হলে অনিয়ম ঠেকাতে কিছুটা হলেও তা কাজে দেবে।"
এনবিআর এমন উদ্যোগ নিলে তা ইতিবাচক হবে বলেই মনে করছেন কর আইন বিশেষজ্ঞ ও স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশিষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের মওকুফ হওয়া সুদের ওপর অনিয়ম করা খুব সহজ হবে না। ফলে খেলাপি কালচার থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ তৈরি হবে।
অবশ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু মনে করেন, এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে অমানবিক।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "একটি প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়ে বাধ্য হয়েই ঋণখেলাপি হয়ে যায়। তার পরও ব্যাংক কখনো প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট মাফ করে না। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সুদের পরিমাণ মাফ করতে পারে। আর এর ওপর ট্যাক্স ধরা হবে মরা মানুষকে জবাই করার মতো। এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে অত্যাচারী জমিদারদের মত আচরণ।"
এরচেয়ে কর আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র জানায়, অনেক সময় ঋণ পরিশোধ না হলে তা বছরের পর বছর গড়ায়। আদালত পর্যন্তও গড়ায়। এর মধ্যে কখনো কখনো সুদের পরিমাণ মূল টাকার চেয়েও বেশি হয়ে যায়। কোনো ধরনের জবাবদিহিতা না থাকায় সহজেই ওই ঋণের সুদ মাফ করে দেওয়া যায়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করেছে, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।