জনগণকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষিত রাখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে: অর্থমন্ত্রী
রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কবল থেকে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
'প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের জন্য অস্বস্তিকর কিছুই থাকছে না এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে'- জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি।
মন্ত্রী বলেন, নতুন অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বাড়ানো, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সম্পদের সুষম বন্টনের মধ্য দিয়ে দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ ও জলবায়ু মোকাবেলায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল- তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে এক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে, যার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরযায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকে পৌঁছেছে।
'আমাদের মূল্যস্ফীতির হার এখনও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম, তবে আমরাও চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি'- উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে মানুষ যাতে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেদিকে বাজেটে নজর দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সোশ্যাল সেইফটি নেট প্রশস্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি।
'আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বিশ্ব অর্থনীতির বিরাজমান অনিশ্চয়তা থেকে কিভাবে আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারি। দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে নরমাল ও গতিশীল রাখতে পারি, নতুন বাজেটে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে'- জানান তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা ও দারিদ্র বিমোচন বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা। '২০০৭ এর বিশ্বমন্দা এবং ১৯৯৭ সালের এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতিও আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিও সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হব।'
'যখন কোন সংকট আসে, তখন কিছু সুযোগও সৃষ্টি হয়। এবারও তা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। এ ধরণের সুযোগ কাজে লাগাতে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে'- জানান মন্ত্রী।
মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেটের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেই। যেকোন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রেও এ দু'টি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বেসরকারিখাতে কোন ছাড় বা সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কতোটা নতুন কর্মসংস্থান হবে, তা বিবেচনা করি আমরা। 'নতুন বাজেটেও তা অব্যাহত থাকবে। সবাইকে নিয়ে উইন উইন পরিস্থিতিতে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।'
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, যুব কর্মসংস্থান এবং নারীর ক্ষমতায়ন মধ্যমেয়াদে সরকারের কর্মসংস্থান কৌশলের দুটি প্রধান অগ্রাধিকার ক্ষেত্র। সুতরাং, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ দ্রুত হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, 'সরবরাহের দিক থেকে, শ্রমশক্তি প্রতি বছর ২.২% হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ২০২২-২৩ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে মোট শ্রমশক্তিতে অতিরিক্ত ৪৭ লাখের বেশি কর্মী যুক্ত হবে। এই সময়ের মধ্যে, সরকার প্রায় ৭২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে; যার মধ্যে- ২০ লাখের অধিক বিদেশে হবে এবং অবশিষ্ট প্রায় ৫২ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি করা হবে।'