ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি; কমপক্ষে ৩১ জনের প্রাণহানী
বুধবার (২৪ নভেম্বর) ইংলিশ চ্যানেলে একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৩১ জন অভিবাসীর মৃত্যু ঘটেছে। ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিলেন তারা। এ ঘটনাকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অভিবাসন ট্র্যাজেডি হিসেবে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানান, নৌকায় ৩৪ জন যাত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ৩১টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৫ জন নারী এবং একটি অল্পবয়সী মেয়ে রয়েছে। তবে, এ ঘটনায় ২জন যাত্রী বেঁচে গেছেন। বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন একজন। তবে, উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে বুধবারই।
দুপুর ২টার দিকে ফরাসি নৌবাহিনীর একটি বোট প্রথমে পানিতে বেশ কিছু লাশ ভেসে থাকতে দেখে। এরপরই উদ্ধারকাজ শুরু হয়।
এদিকে, উদ্ধার অভিযান তদারকি করা আঞ্চলিক সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষের তথ্যসূত্র মতে, এ পর্যন্ত ২৭টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের মধ্যে দু'জন বেঁচে গেছেন এবং অন্য ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা ডুবে গেছেন বলে ধারণা করছে তারা। মৃতের সংখ্যার এই অমিল তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।
মৃতদেহগুলো ইতোমধ্যে ক্যালাইস বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান ক্যালাইস এবং বুলোন বন্দরের প্রধান জিন-মার্ক পুইসেসো। "আমরা এইরকম কিছু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম," অভিবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিংয়ের বিষয় উল্লেখ করে এ কথা বলেন তিনি।
আফগানিস্তান, সুদান, ইরাক, ইরিত্রিয়া বা অন্য কোনো দেশে চলমান সংঘাত বা দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা লোকের সংখ্যা ফ্রান্সে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এরাই ফ্রান্স থেকে আরও ভালো সুযোগের আশায় ব্রিটেনে বিপজ্জনকভাবে যাত্রার ঝুঁকি নিচ্ছে। ২০২০ এর তুলনায় এই বছর ক্রসিং তিনগুণ বেড়েছে। শুধুমাত্র বুধবারই ফরাসি সীমানায় আরও ১০৬ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, ফ্রন্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া নৌকার সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে বুধবার চার সন্দেহভাজন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন দুইজনকে পরে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার পর হত্যাকাণ্ড, সংগঠিত অবৈধ অভিবাসন এবং অন্যান্য বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন আঞ্চলিক প্রসিকিউটর। প্রসিকিউটর ক্যারোল ইটিন দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, কর্মকর্তারা এখনও ক্ষতিগ্রস্তদের সনাক্ত করে তাদের বয়স এবং জাতীয়তা নির্ধারণের জন্য কাজ করছেন। এই তদন্তে একাধিক দেশ জড়িত থাকতে পারে।
"এটি ফ্রান্স, ইউরোপ ও মানবতার জন্য একটি মহান শোকের দিন," দারমানিন বলেছিলেন। হাজার হাজার লোককে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যাওয়া 'অপরাধী পাচারকারীদের' তিরস্কার করেন তিনি।
অভিবাসীদের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি দাবি করে বুধবার রাতে ক্যালাই বন্দরের বাইরে বিক্ষোভ করে অ্যাক্টিভিস্টরা। নিয়মিত পুলিশি টহল এবং উচ্ছেদ অভিযান সত্ত্বেও ফরাসি উপকূলে শত শত মানুষ বর্তমানে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বাস করছে।
বুধবারের ঘটনার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বক্তব্য রাখেন। এই 'প্রাণঘাতী ক্রসিংগুলো' বন্ধ করতে সম্মত হন উভয়েই।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮০০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে তারা।
এই বছর এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোক এই ধরনের বিপজ্জনক পথে ব্রিটেনে যাত্রা করেছে। গতবছরের তুলনায় সংখ্যাটি মোট তিনগুণ। পরিবর্তনশীল আবহাওয়া, শীতল সমুদ্র এবং ভারী সামুদ্রিক যানবাহনের কারণে এই ক্রসিংটি ছোট নৌকাগুলোর জন্য বেশ বিপজ্জনক।
সারা বিশ্বের অভিবাসীরা দীর্ঘকাল ধরেই উত্তর ফ্রান্স থেকে ট্রাকে করে বা চোরাকারবারীদের তৈরি ছোট নৌকা ব্যবহার করে ব্রিটেনে বিপজ্জনকভাবে যাত্রা করছে। এদের মধ্যে অনেকেই অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে ব্রিটেনকে বেছে নেন। তবে, ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলে, ব্রিটেনে আবাসিক কাগজপত্র ছাড়াই অভিবাসীদেরকে বসবাস করতে দেওয়ার নিয়ম থাকায় তারা এই উপায় বেছে নেয়।
- সূত্র: বাসস/ এপি