অভিবাসী সংকট কমাতে বেলারুশে ফ্লাইট বন্ধ তুরস্কের
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) মিনস্কে যাওয়ার ফ্লাইটে সিরিয়ান, ইয়েমেনি এবং ইরাকি নাগরিকদের নিষিদ্ধ করেছে তুরস্ক। নিজেদের সীমান্তে মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে অতীতে এই রুট দিয়েই হাজারো অভিবাসী বহিস্কার করছে বেলারুশ।
গত সোমবার (৮ নভেম্বর) মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার অভিবাসী বেলারুশ, পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার সীমান্তে অবস্থান করছে। কোনো দেশেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছেনা তাদেরকে। সীমান্তের জঙ্গলে হিমাশীতল অবস্থায় আশ্রয় নিচ্ছে তারা। হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। এছারা, বাকিদের নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা।
এই মানবিক সংকটের জন্য মিনস্ককে দোষারোপ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যে বেলারুশিয়ান ভিসা বিতরণ এবং অভিবাসীদেরকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে, আগামী সোমবারের মধ্যে বেলারুশ এবং অন্যান্য কিছু এয়ারলাইন্সের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ব্রাসেলস। তবে, মানবিক সংকটকে উস্কে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে বেলারুশ।
এদিকে, তুরস্কের সিভিল এভিয়েশন জেনারেল ডিরেক্টরেটের শুক্রবারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। ইউরোপীয় কমিশনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইরাকি এয়ারওয়েজও বেলারুশের ফ্লাইট বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে।
তবে, ইইউর সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের প্রধান ফ্যাব্রিস লেগেরি বলেন, পোল্যান্ডের সীমান্তে অভিবাসী সংকটের দ্রুত শেষ দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, "দীর্ঘ সময় ধরে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদেরকে।" এছাড়া, অভিবাসীদেরকে নিজেদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পোল্যান্ডকে সহায়তা করবে ফ্রন্টেক্স।
এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার পোলিশ সীমান্তের কাছে যৌথ মহড়ায় অংশ নেওয়ার সময় প্যারাসুটের সমস্যার কারণে তাদের দুজন সেনা সদস্য নিহত হয়।
পোলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেলারুশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার ২২৩টি প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে তারা। তাদের অনুমান অনুযায়ী, সীমান্তে আটকে পড়া অভিবাসীর সংখ্যা ৩ থেকে ৪ হাজার।
এছাড়া, প্রতিবেশী দেশ লিথুয়ানিয়া রাতারাতি ১১০টি ক্রসিং প্রচেষ্টার রিপোর্ট করেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সীমান্তে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেজার তারের বাঁধা তৈরি করবে তারা।
অভিবাসীদের অবস্থা
দাতব্য সংস্থা এবং উকিলদের মতে, সীমান্তে হিমায়িত অবস্থা একটি মানবিক জরুরী অবস্থা তৈরি করেছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের রাজ্যগুলোর উচিত তাদেরকে খাদ্য ও আশ্রয়ের অ্যাক্সেসের অনুমতি দেওয়া।
তাছাড়া, এই অঞ্চলে কোনো মিডিয়া প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে সংকটের মাত্রা গোপন করা হচ্ছে।
পোলিশ সংস্থা গ্রুপা গ্রানিকা (বর্ডার গ্রুপ) এর ইও লস বলেন, "এই লোকদের... মানবিক সাহায্য, চিকিৎসা সহায়তা পেতে হবে এবং এই সাহায্য অবশ্যই সীমান্তের দুই পাশে পৌঁছে দিতে হবে।"
এদিকে, বেলারুশের সীমান্তবর্তী বাল্টিক দেশগুলো আশঙ্কা করছে, সংকটটি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া এবং এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রপতিরা সোমবার ভিলনিয়াসে এই সংকট নিয়ে আলোচনা করবেন। এই আলোচনায় পোলিশ রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ দুদার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যোগ দেবেন।
- সূত্র: রয়টার্স