চীন থেকে ফিরতে চান আরও ১৭২ শিক্ষার্থী
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হলেও সেখানে আটকা পড়ে আছে আরও অনেকেই।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ইচাং শহরে চায়না থ্রী গর্জেজ ইউনিভার্সিটিতে আটকা পড়া আরও ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় দেশে ফিরতে বাংলাদেশ সরকার এবং দূতাবাসের হস্তক্ষেপ কামনা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন তারা।
ইচাং শহরে অবস্থানরত একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জানান, অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে তাদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এই পুরো সময় বিশুদ্ধ পানি, খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেনি তাদের।
চায়না থ্রী গর্জেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, "আমাদের এই শহর ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের খুবই নিকটে। আমাদের এখানে লক ডাউন জারি করা হয়েছে। এখানকার সমস্ত যাতায়াত ব্যবস্থা, বাজার, দোকান সহ সব কিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির খুবই সংকট দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে আমরা সবাই বদ্ধ জীবনযাত্রায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে আমরা আমাদের বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তবে তাদের কাছ থেকে আমরা আশানুরূপ কোনো খবর পাইনি। দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন তারা দেশ থেকে আসা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। অথচ দেশে যোগাযোগ করে আমরা জানতে পেরেছি যে দেশ থেকে আমাদের ফিরিয়ে নেবার জন্য তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।"
তিনি আরো বলেন, "আমরা অবিলম্বে দেশে ফিরে যেতে চাই। এখানকার অবস্থা দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিনই পূর্বের দিনের চেয়ে আরো বেশি লোক আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি খাবার ও পানির অভাবে আমরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে আছি। আমরা এই অবস্থা থেকে অতিদ্রুত উত্তরণ আশা করছি, যদিও আমরা জানি না আমরা দূতাবাস থেকে আদৌ কোনো সাহায্য পাবো কিনা।"
ওয়াটার রির্সোস এন্ড হাইড্রো পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শহিদুল ইসলাম বলেন, "চায়না থ্রী গর্জেজ ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রছাত্রীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। এদের উদ্ধার করার ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিশেষ ফ্লাইট পাঠিয়ে উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও এখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মন্ত্রীপরিষদ সচিব জনাব আনোয়ারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা খুব দ্রুত এই শিক্ষার্থীদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। অথচ অ্যাম্বাসি থেকে জানানো হয়েছে, তারা এখনও ঢাকা থেকে তেমন নির্দেশনা পাননি৷ এমন সমন্বয়হীনতার ভুক্তভোগী বাংলাদেশী ১৭২ শিক্ষার্থী।"
তিনি আরো বলেন, "ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় ও খাদ্য-পানির অভাবে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই মুহুর্তে আমরা সবাই সরকারের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করার জন্য।"
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি খাইরুল বাশার বলেন, "আমি ইউনির্ভাসিটির কোর্স কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শির্ক্ষাথীদের জন্য ক্যান্টিন চালু রেখেছে। ওখানে ফোন করে অর্ডার করতে হয়। সকালে অর্ডার করলে দুপুরের খাবার দিয়ে যাচ্ছে। দুপুরে অর্ডার করলে রাতের খাবার দিয়ে যাচ্ছে। এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফোনে অর্ডার করলে ইউনির্ভাসিটির গাড়ী দিয়ে রুমে দিয়ে যাচ্ছে। তারা সেসব অভিযোগ করেছে সেগুলো অযৌক্তিক। এগুলোর কোনো বাস্তবতা পাওয়া যায়নি। ইউনির্ভাসিটি এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।"
ঢাকা থেকে নেওয়া সিদ্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, "ঢাকা থেকে যদি কোন সিন্ধান্ত নেওয়া হয়, আর দূতাবাস যদি বাস্তবায়ন না করে তাহলে কি কারো চাকরি থাকবে? ঢাকা থেকে কোন সিন্ধান্ত নেওয়া হয় নাই এখন পর্যন্ত।"