এবার কি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন গ্রেটা?
সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ (১৮) এ বছর শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই। আগামী ৮ অক্টোবর নরওয়ের অসলোতে ঘোষিত হতে যাচ্ছে এ বছরের বিজয়ীর নাম।
নোবেল পুরস্কার পর্যবেক্ষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী চলমান যে সমস্যার দিকে কমিটির সদস্যরা বিশেষ নজর দেন, তার ওপর নির্ভর করে পুরস্কারের বিজয়ী। নরওয়েতে পাঁচ সদস্যের কমিটি প্রতিবার বিজয়ী নির্বাচন করেন।
এদিকে, নোবেল বিজয়ী ঘোষণার তিন সপ্তাহ পর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন। ফলে, এবার নোবেল কমিটি বৈশ্বিক উষ্ণতার ওপর গুরুত্ব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়টিও গ্রেটা থানবার্গের বিজয়ের ইঙ্গিত দেয়।
গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মেলনটিকে আগামী এক দশকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের জন্য প্রয়োজনীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। তাপমাত্রার পরিবর্তনকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার উদ্দেশ্যে আয়োজিত হবে এ সম্মেলন।
গ্রেটা থুনবার্গের বিষয়ে করা এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী হবেন তিনি। এর আগে সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী হিসেবে নোবেল জিতেছেন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ রয়টার্সকে বলেন, "নোবেল কমিটি তাদের নির্বাচিত বিজয়ীর মাধ্যমে বিশ্বের সামনে বিশেষ বার্তা তুলে ধরতে চায়। আসন্ন কোপ-২৬ সম্মেলনের জন্য এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে।"
এছাড়াও, গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা ইস্যুও বিবেচনায় নিতে পারে নোবেল কমিটি। ফলে সম্ভাব্য বিজয়ীর এ তালিকায় রয়েছেন বেলারুশের নির্বাসিত বিরোধীদলীয় নেতা ভিয়াতলানা সিকানুস্কায়া এবং কারাবন্দী রুশ অ্যাক্টিভিস্ট আলেক্সি নাভালনি।
পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো -এর পরিচালক হেনরিক উর্দাল বলেন, সাংবাদিকতা অ্যাডভোকেসি গ্রুপের বিজয়ের মাধ্যমে 'স্বাধীন রিপোর্টিংয়ের গুরুত্ব এবং গণতান্ত্রিক শাসনের ক্ষেত্রে ভুয়া খবরের লড়াই নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের' বিষয়টি প্রতিধ্বনিত হবে।
তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ভ্যাকসিন বিতরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের মতো প্রতিষ্ঠান এবার বিজয়ী হতে পারে বলেও ধারণা করছেন অনেকে। কিন্তু পুরস্কার পর্যবেক্ষকদের মতে, এর সম্ভাবনা কম।
যদিও যে কোনো দেশের সংসদ সদস্যরা পুরস্কারের জন্য প্রার্থী মনোনীত করতে পারেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নরওয়ের আইন প্রণেতাদের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্য থেকেই বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছে।
রয়টার্সের জরিপ থেকে জানা গেছে, এবার নোবেলের জন্য থুনবার্গ, নাভালনি, সিকানুস্কায়া এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মনোনীত করেছে দেশটির আইন প্রণেতারা।
ভল্টের গোপনীয়তা
নোবেল কমিটির সম্পূর্ণ আলোচনা সর্বদাই গোপন রাখা হয়। কিন্তু, '৫০ বছরের গোপনীয়তা নিয়ম' অনুযায়ী, পঞ্চাশ বছর পর মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এবারের ৩২৯ জন প্রার্থীর তালিকাটিও নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটে সুরক্ষিত আছে।
ভল্টের ভেতর সারিবদ্ধভাবে রাখা ফোল্ডারগুলোতে সবুজ ফোল্ডারে রয়েছে মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা, এবং নীল ফোল্ডারে রয়েছে সংশ্লিষ্ট চিঠিপত্র।
সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকাটি ছিল নোবেলের ১৯৭১ সালের আসরের। সে বছর নোবেল জিতেছিলেন পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডট। বিংশ শতকের স্নায়ুযুদ্ধের সময় পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যকার উত্তেজনা কমিয়ে আনতে তার নেওয়া পদক্ষেপের জন্য এ পুরষ্কার পান তিনি।
লাইব্রেরিয়ান বোয়ের্ন ভ্যানজেন বলেন, 'আজ আপনি যে ইউরোপ দেখতে পাচ্ছেন তা মূলত তার প্রচেষ্টার ফল।'
নথিপত্রে দেখা যায়, উইলির ব্র্যান্ডটের পাশাপাশি এ তালিকায় নাম ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ফরাসি কূটনীতিক জাঁ মোনে-র। মনোনয়নের আরও ৪১ বছর পর ২০১২ সালে নোবেল জেতে ইইউ।
- সূত্র: রয়টার্স