কপ-২৬: ধনীরা প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটলেও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো এখনও আশাবাদী
ধনী দেশগুলো তাদের পূর্বপ্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটার পরও গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ আলোচনায় সামান্য অগ্রগতি দেখছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।
৬ নম্বর ধারার ইস্যুগুলো নিয়ে—কোন পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, জলবায়ুর আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত ইস্যু ও স্বচ্ছতা—দেশগুলো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা আগামী সপ্তাহে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমাতে ধনী দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। ২০২০ সালে এই ১০০ বিলিয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ধনী দেশগুলো। কিন্তু উন্নত দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতি পূরণে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় চাইছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলার সময় শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক সলিমুল হক বলেন, 'কপ-২৬ এখন পর্যন্ত হতাশাজনক। প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে এটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাথে একটি ফটোসেশনে পরিণত হয়েছে।'
তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা তাদের ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন, যা 'একেবারেই অগ্রহণযোগ্য'।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশও গ্লাসগোতে ৬-৮টি ইস্যু নিয়ে আলোচনা তুলেছে।
জলবায়ু অভিযোজন এবং জলবায়ু প্রশমন প্রকল্পের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতে প্রতিশ্রুত অর্থ ব্যবহারের দাবি করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জলবায়ু অর্থায়নের ২০ শতাংশ অভিযোজন প্রকল্পের জন্য এবং ৫০ শতাংশ প্রশমন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশও সিদ্ধান্ত চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ নভেম্বর তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, 'উন্নত দেশগুলোর উচিত তাদের ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। সেইসঙ্গে অভিযোজন ও প্রশমনে ৫০:৫০ ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।'
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা জলবায়ু অর্থায়নের আশা করছিলাম। কিন্তু তা বিলম্বিত হয়েছে। এখন আগামী বছর থেকে অর্থছাড় শুরু করার কথাও তারা বলছে। ওরা এখন বলছে, ২০২৪ সাল থেকে অর্থ দেওয়া শুরু হবে।
তিনি বলেন, সমস্যাটির এখনও সমাধান করা হয়নি। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো অবিলম্বে তহবিল ছাড়ের দাবি করছে।
গ্লাসগো সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেইসঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ক্ষয়, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব গোটা বিশ্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার ওপরও জোর দিচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও বলেছে যে, ওয়ার্কিং গ্রুপগুলো লক্ষ্য বাস্তবায়ন নিশ্চিত না করলে কেবল সম্মেলন আয়োজনই যথেষ্ট নয়।
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ধারা-৬ নিয়ে আলোচনা চলছে।
৬ নম্বর ধারা সম্পর্কে বাংলাদেশের আলোচক মির্জা শওকত আলী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো আমাদের দাবি, অভিযোজন কর ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হোক।
তবে উন্নত দেশগুলো রাজি না হওয়ায় এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সম্মেলনের একটা বড় সাফল্য হলো, বন ও ভূমি ব্যবহারের বিষয়ে গ্লাসগো নেতাদের ঘোষণা বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পন্ন করা। ব্রাজিলসহ ১৩৪টি দেশ এই চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এ ঘোষণার লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি ধ্বংস ও ভূমিক্ষয় বন্ধ করা।
তাছাড়া কিছু দেশ তাদের নেট জিরো লক্ষ্য হালনাগাদ করেছে।
বিশ্বব্যাংকও তার ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যানের মাধ্যমে বার্ষিক জলবায়ু অর্থায়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেবে। এ তহবিল কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার উপর জোর দেবে।
এছাড়াও ২৩টি দেশ জাতীয় জলবায়ু শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অধ্যাপক সলিমুল হক বলেন, গ্লাসগো সম্মেলনে ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা থাকলেও উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়নি।
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের জলবায়ু ও অর্থনীতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলেন মাউন্টফোর্ড অবশ্য আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, জলবায়ু সম্মেলনে এখনও খানিকটা ইতিবাচক গতি রয়েছে।