কপ-২৬ সম্মেলনকে ‘ব্যর্থ’ বললেন গ্রেটা
গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনকে এখন পর্যন্ত একটি 'ব্যর্থতা' হিসাবে অভিহিত করেছেন জলবায়ুবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। বিশ্বনেতাদের বিরুদ্ধে আলোচনায় উল্লেখিত নিয়মের মধ্যে বিভিন্ন ফাঁকফোকর রাখার বিষয়ে অভিযোগ করেন তিনি।
কনফারেন্স ভেন্যুর বাইরে একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এই অ্যাক্টিভিস্ট। এসময় বিশ্বনেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন তিনি। মূলত, তাদের আলোচনায় প্রস্তাবিত নিয়মগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ফাঁকফোকর রাখার বিষয়ে অভিযোগ করেন গ্রেটা। দূষণকারীদেরকে দমন করার জন্য কঠোর নিয়মের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, "বিশ্ব নেতারা স্পষ্টতই সত্যকে ভয় পান। কিন্তু তারা যতই চেষ্টা করুক না কেন, এ থেকে পালাতে পারবেন না। বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করতে পারে না তারা। তারা নিজের সন্তানসহ সকল মানুষকে উপেক্ষা করতে পারে না।"
"এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে কপ-২৬ ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের অবিলম্বে কঠোরভাবে বার্ষিক নির্গমন হার কমানো দরকার," বলেন গ্রেটা।
এই অ্যাক্টিভিস্ট আরও বলেন, "ক্ষমতাসীন লোকেরা এখনও তাদের কল্পনার জগতেই আছেন। তারা ভাবেন, তারা ভাবেন, পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত উন্নতি কখনোই শেষ হবে না, কিংবা এমন কোনো সমাধান আসবে যা নিমিষেই এসব সমস্যা দূর করবে।"
জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনকে বিশ্বনেতাদের 'বর্তমান কার্যক্রম যথারীতি চালিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের লাভের জন্য ফাঁকফোকর তৈরি করার একটি দুই সপ্তাহব্যাপী উদযাপন' বলে উল্লেখ করেন গ্রেটা।
গ্রেটার পাশাপাশি এই আয়োজনে বক্তব্য রাখেন অন্যান্য দেশের আন্দোলনকর্মীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন উগান্ডার ভ্যানেসা নাকাতে। তিনি বলেন, "আফ্রিকা বিশ্বব্যাপী নির্গমনের মাত্র ৩ শতাংশের জন্য দায়ী। কিন্তু, জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে নৃশংস প্রভাবের শিকার হচ্ছে আফ্রিকানরাই।"
এদিকে, মার্কিন জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি শুক্রবার জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু বিষয়ক সহায়তার উদ্দেশ্যে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের যৌথ প্রতিশ্রুতিতে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করবে উন্নত দেশগুলো। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অধীনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই অর্থায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নত দেশ।
অর্থনীতিকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানীতে পরিবর্তন করতে অক্ষম স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেন তাদের জনগণকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন বৈদেশিক সাহায্য। মূলত, ধনী দেশগুলোর ব্যবহৃত কয়লা এবং পেট্রোলিয়াম পোড়ানো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তাই স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোর উচিত তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। তাদের পদক্ষেপগুলোকে ১৯৩০ এর দশকে ফ্যাসিবাদের হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে ব্যর্থ হওয়ার সাথে তুলনা করেন তিনি। উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত সতর্কবাণী- 'গড়িমসি করার যুগ ঘনিয়ে আসছে' এর উদ্ধৃতি দিয়ে গোর বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবগুলোর ফলে খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বিশ্বনেতারা।
গোর আরও বলেন, "আমরা এখন বিশ্বের প্রতিটি অংশে জলবায়ু সংকটের পরিণতি অনুভব করছি। এই পরিণতি সম্বন্ধে আমাদেরকে আগেই সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।" ২০০৬ সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বিষয়ক অস্কারবিজয়ী ডকুমেন্টারি 'অ্যান আনকনভেনিয়েন্ট ট্রুথ' -এ অভিনয় করেন গোর।
সূত্র: বিবিসি