কাবুলে নিহত তরুণ ইউটিউবার নাজমা, লোকসংগীত শিল্পী ফাওয়াদ আন্দারাবিকে হত্যার অভিযোগ
কাবুল তালেবানের দখলে যাওয়ার চারদিন পর বিছানায় বসে নিজের শেষ ভিডিওটি রেকর্ড করেছিলেন আফগান ইউটিউবার নাজমা সাদেকি।
২০ বছর বয়সী নাজমা কাবুলের জার্নালিজম ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হামলার ঘটনায় নিহত হন এই ইউটিউবার।
সাধারণত ইউটিউবে রান্না এবং বন্ধুদের সঙ্গে কাবুলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও শেয়ার করতেন নাজমা। কিন্তু, ব্যতিক্রম ছিল তার শেষ ভিডিও।
ভিডিওটিতে নাজমা কথা বলা শুরু করার আগেই তার চোখেমুখে ভীতসন্ত্রস্ত ভাব ফুটে উঠেছিল।
"আমাদের যেহেতু ঘরের বাইরে যাওয়া বা কাজের অনুমতি নেই, তাই আপনাদের জন্য শেষ একটি ভিডিও রেকর্ড করতে হলো। এই ভিডিওর মাধ্যমেই আপনাদের বিদায় জানাব," বলেছিলেন নাজমা।
"কাবুলের জীবন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যারা মুক্তভাবে আনন্দে বাঁচতে চেয়েছিল তাদের জন্য। আমি আশা করি এটা যেন একটা খারাপ স্বপ্ন হয় আর আমরা সবাই একদিন জেগে উঠতে পারি," কান্না সংবরণ করে বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন তিনি।
ভিডিওটি করার কয়েকদিনের মাথায় কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে হামলায় নিহত হন নাজমা। সিএনএনের কাছে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন দুই সহকর্মী। নাজমাসহ এই হামলায় দেশত্যাগে মরিয়া ১৭০ জন আফগান নিহত হন।
সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী নাজমা সাদেকি সাম্প্রতিক সময়ে ইউটিউব চ্যানেল আফগান ইনসাইডারের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই চ্যানেলের ভিউ সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখের বেশি।
চ্যানেলটি মূলত সাপ্তাহিকভাবে তরুণ কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরত। তালেবান শাসন পরবর্তী আমলে বেড়ে উঠেছেন এই ইউটিউবাররা। সাদেকির মতো তরুণ কনটেন্ট নির্মাতারা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের আকাঙ্খা পূরণের পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
লোকসংগীত শিল্পী ফাওয়াদ আন্দারাবিকে হত্যার অভিযোগ
বাড়ি থেকে বের করে এনে আফগান লোকসংগীত শিল্পী ফাওয়াদ আন্দারাবিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তালেবানের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার কাবুলের উত্তরে বাগলান প্রদেশে বাড়ি থেকে ডেকে ফাওয়াদ আন্দারাবিকে হত্যার খবর সিএনএনকে জানান স্থানীয় এক সাংবাদিক।
দ্য অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে দেওয়া বক্তব্যে ফাওয়াদ আন্দারাবির ছেলে জাওয়াদ জানান, উত্তর বাগলানের আন্দারাব উপত্যকায় তাদের পারিবারিক ফার্মে 'মাথায় গুলি করে' তার বাবাকে হত্যা করা হয়।
"তিনি নির্দোষ একজন মানুষ ছিলেন। একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে তার কাজ ছিল মানুষের মনোরঞ্জন করা," এপিকে বলেন জাওয়াদ।
একই অঞ্চলের বাসিন্দা আফগানিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাসুদ আন্দারাবি স্থানীয় গণমাধ্যমে ফাওয়াদ আন্দারাবির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি নতুন করে শঙ্কিত করছে আফগান শিল্পীদের। তালেবান তাদের আগেকার শাসনামলের মতোই কঠোরভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সংগীত ছিল নিষিদ্ধ।
বুধবার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, "ইসলামে সংগীত নিষিদ্ধ"।
আফগানিস্তানে পুনরায় প্রকাশ্যে সংগীত চর্চা নিষিদ্ধ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "জোর করার পরিবর্তে মানুষ যেন নিজে থেকেই এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে সেই চেষ্টাই করবেন তারা।"
ধর্মীয়ভাবে অর্থবহ নয় এমন ধারার সংগীতের বিরুদ্ধে তালেবানের কঠোর অবস্থানের কারণে আফগান শিল্পীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা।
আক্রমণাত্মক হামলা বন্ধ করতে একটি চুক্তি করা হয়েছে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন তালেবান কমান্ডাররা। তবে, নর্দান অ্যালায়েন্স এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
- সূত্র: সিএনএন