টিকটক কিনতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিলামে অংশ নিচ্ছেন মিস্টারবিস্ট
ইউটিউব ও টিকটক তারকা মিস্টারবিস্ট এক বিনিয়োগকারী দলের হয়ে টিকটক কেনার পরিকল্পনা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি টিকটককে চীনা নাগরিক নন এমন একজনকে মালিক বানাতে ৭৫ দিনের সময়ে দিয়েছে। তা না হলে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে টিকটক।
গত ১৩ জানুয়ারি আরেক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ টিকটক তারকা মিস্টারবিস্ট যার আসল নাম জিমি ডোনাল্ডসন বলেন, "আচ্ছা ঠিক আছে। টিকটক যাতে নিষিদ্ধ না হয় সেজন্য আমি টিকটক কিনে নিচ্ছি।" ইউটিউবের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং টিকটকের তৃতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ডোনাল্ডসন কথাটি মজা করে বললেও, তার আইনজীবী গত মঙ্গলবার সিএনএনকে জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস।
টিকটক নিয়ে চলা কয়েকদিনের ঘটনায় ডোনাল্ডসন ও বিনিয়োগকারীদের একটি দলে পক্ষ থেকে টিকটক কেনার বিষয়টি নাটকীয় মোড় এনে দিয়েছে।
দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা দেখা দিলে গত শনিবার রাতে টিকটক বন্ধ হয়ে যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞার আগে ৭৫ দিনের সময় দেওয়ার ঘোষণা দিলে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর টিকটক আবারও সচল করা হয়।
এক্স-এ টিকটক কেনার ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করার দু-দিন পর ডোনাল্ডসন টিকটকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি এ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মটি কেনার কথা জানান।
ভিডিওকে মিস্টারবিস্ট বলেন, "আমি মাত্রই কয়েকজন বিলিয়োনিয়ারের সঙ্গে মিটিং করে বের হলাম। টিকটক মানেই আমাদের কাছে ব্যবসা। আমার পাশেই আমার আইনজীবী আছেন। আমরা তোমাদের জন্য একটা প্রস্তাব রাখছি, আমরা প্লাটফর্মটি কিনতে চাই।"
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত ফেডারেল আইনের পক্ষে রায় দিয়েছে। রায় অনুসারে, টিকটককে চীনা নাগরিক নন এমন কারো কাছে বিক্রি করতে হবে অন্যথায় এটি নিষিদ্ধ করা হবে। আদালতের এ সিদ্ধান্তের পরই মিস্টারবিস্ট এ বিষয়ে আবেদন জানান।
বিডে অংশ নেওয়া কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিত্বকারী আইন সংস্থা পল হেস্টিংসের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
বিনিয়োগকারী গ্রুপটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমপ্লয়ার ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেসি টিন্সলি। তারা চান না অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাক।
বিনিয়োগকারী গ্রুপের মতে, প্রস্তাবটি টিকটকের কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন ঘটাবে না এবং এর ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে।
এক বিবৃতিতে জেসি টিন্সলি বলেন, "আমাদের প্রস্তাব একটি উইন-উইন সমাধান, যা এই গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মটি সংরক্ষণ করবে এবং একই সঙ্গে বৈধ জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগগুলোর সমাধান দেবে।"
তবে বিবৃতিতে বিডের অর্থমূল্য প্রকাশ করা হয়নি। সিএনএন মন্তব্যের জন্য টিকটকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
সময় ফুরিয়ে আসছে
২০২০ সাল থেকে টিকটক বিক্রির বিষয়ে আলোচনা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তার প্রথম মেয়াদেই টিকটক নিষিদ্ধের চেষ্টা করেছিলেন।
গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে ফেডারেল আইনের পক্ষে রায় দিয়েছে, যা অনুযায়ী টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সকে এটি কোনো চীনের নাগরিক নন বা চীনা প্রতিষ্ঠান নয় এমন কারো কাছে বিক্রি করতে হবে, অন্যথায় অ্যাপটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার টিকটক বন্ধ হয়ে যায় এবং অ্যাপে একটি বার্তা প্রদর্শিত হয়, "দুঃখিত, এই মুহূর্তে টিকটক বন্ধ আছে। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার একটি আইন কার্যকর হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, এর অর্থ হলো আপাতত আপনি টিকটক ব্যবহার করতে পারবেন না।"
তবে, সোমবার অভিষেকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, তিনি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন, যার মাধ্যমে আইনের বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হবে। এরপর টিকটক আবারও চালু করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশটি টিকটক নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা ৭৫ দিনের জন্য স্থগিত করেছে, তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান দেয়নি।
বাইটড্যান্সকে অবশ্যই নতুন কোনো ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে হবে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্টভাবে বলেছে যে, তাদের বিক্রির কোনো ইচ্ছা নেই। অন্যথায়, ট্রাম্প প্রশাসনকে আগের আইন বাতিল করতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা খুবই অসম্ভব, কারণ কংগ্রেসে বর্তমান আইনের প্রতি ব্যাপক দ্বিদলীয় সমর্থন রয়েছে।
টিকটক কিনতে নিলামে আবেদন জমা পড়ছে
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা কর্মকর্তারা প্রযুক্তি মুঘল ইলন মাস্কের কাছে অন্তত আংশিকভাবে টিকটক বিক্রির কথা বিবেচনা করছেন। তবে, সিএনএন এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি এবং বাইটড্যান্স ও ইলন মাস্ক সিএনএনের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।
'দ্য পিপলস বিড ফর টিকটক' নামে একটি গ্রুপ, যেখানে শার্ক ট্যাংক-এর কেভিন ও'লিয়ারি এবং ধনকুবের ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককোর্ট রয়েছেন, তারাও টিকটক কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
পিপলস বিড গুগেনহেইম সিকিউরিটিজের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব উদ্ভাবক টিম বার্নার্স-লিও এখানে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভসের মতে, অ্যালগরিদম ছাড়া টিকটকের মার্কিন সম্পদের মূল্য আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে।
তবে, টিকটকের মূল্যমানের বড় একটি অংশ অ্যালগরিদমে নির্ভরশীল হওয়ায়, কোম্পানিটির প্রকৃত বাজারমূল্য নির্ধারণ করা কঠিন।
ম্যাককোর্টের গ্রুপটি এখনও তাদের প্রস্তাবের আর্থিক পরিমাণ জনসমক্ষে জানায়নি, যদিও ধনকুবের আগে বলেছিলেন যে, তার সম্পদের মূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছেন।
গত সপ্তাহে ও'লিয়ারি ও ম্যাককোর্টের গ্রুপটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "আমরা আমাদের প্রস্তাবের আর্থিক বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকব, যতক্ষণ না বাইটড্যান্স আমাদের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য প্রস্তুত হয়।"